• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

জৈন্তাপুরে থেমে নেই ভুমিদস্যু মখছুছ চৌধুরী!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মে ১৬, ২০২২
জৈন্তাপুরে থেমে নেই ভুমিদস্যু মখছুছ চৌধুরী!

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ১ নং নিজপাট ইউনিয়নের এক ভূমিদস্যু জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সাধারন মানুষকে জিন্মি করে তাদের জমিজমা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট সহ কয়েকটি মৌজায় তার একাধিক ভূমিদস্যুতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ভুমিদস্যু জালিয়াত জৈন্তাপুর উপজেলার ১ নং নিজপাট ইউনিয়নের চুনাহাটি মহল্লার মৃতঃআব্দুল লতিফ চৌধুরীর ছেলে মখছুছুল আম্বিয়া চৌধুরী প্রকাশ ( মখছুছ )।

মখছুছ চৌধরী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন জৈন্তাপুরের আলবদর,শান্তি কমিটির থানা আহ্বায়ক রাজাকার আবুল হাসনাত চৌধুরী ওরফে কন্টু মিয়ার ভাতিজা ও আলবদর শান্তি কমিটির তালিকাভুক্ত শহীদ আলতাফ ও রাসিকের স্বীকৃত হত্যাকারী রাজাকার ফয়জুল আম্বিয়া চৌধুরীর চাচাতো ভাই।

এলাকাবাসীর অনেকেই বলে থাকেন যে শহীদ আলতাফকে এই মখছুছ চৌধুরীই তার দলবল নিয়ে ধরে এনে তার রাজাকার ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তার অবস্থান সন্দেহজনক।তবে সে গর্বভরে এলাকায় প্রচার করে, সে নাকি ১৯৬৯ সালে জৈন্তাপুর থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃসিরাজউদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা ডাহা মিথ্যা বলে জানান!

তিনি আরোও জানান এই মখছুছ চৌধুরী ও তার পরিবারের ভূমিদস্যুতার ইতিহাস বহু পুরোনো।অনেক অর্পিত সম্পত্তি ও মোহাজিরের সম্পত্তি এরা আত্মসাৎ করেছে।উল্লেখ্য যে, জনাব সিরাজউদ্দীন শহীদ আলতাফের আপন বড় ভাই।

সম্প্রতি কিছুদিন পূর্বে একটি গণমাধ্যমে ভিডিও সাক্ষাতে দাবী করে ১৯৬৯ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমান তাকে খুশী হয়ে ১০,০০০ টাকা উপহার দিয়েছিলেন!

কি কারণে,কেন সেকালে আওয়ামী লীগের আর্থিক দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু তাকে এতটাকা দিয়েছিলেন তার ইতিহাস কেউ জানেনা!

১৯৭৭-৭৮ সালে ততাৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিটি থানায়‘ইয়ুথ ক্লাব’গঠন করলে বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা পথে ছুড়ে ফেলে সে জৈন্তাপুর থানা ইয়ুথ ক্লাবের সেক্রেটারি পদে বসে।

পরবর্তীতে বিএনপির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে আজো আছে।বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও সে দাপটের সাথে প্রশাসন দাবড়িয়ে বেরিয়েছে।

বদলী-নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ছিলো রমরমা ব্যাবসা। জোট সরকার এর পর ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে তার ছন্দপতন ঘটে। তার এবং তার পারিবারীক সমস্ত সম্পত্তি সরকার ভুমি হিসাব প্রদানে জালিয়াতি ও প্রতারনা করে সরকারকে ঠকানোর কারণে বসত-বাড়ী সহ প্রায় সমস্ত সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে নিয়ে নেন!

তদন্তে জানা যায়, ভুমি জালিয়াতির কারণেই ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশবলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে তাদের সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপির কয়েকটি আমলে তাদের চলমান ভুমি মামলা ও সমস্ত আমলনামা প্রভাব খাটিয়ে মামলার নথিপত্র গায়েব করে পার পেয়ে যায়।

এরপর থেকে সে এসব তার ভাইয়েরা মিলে এসব সম্পত্তি সরকারের অগোচরে তথ্য গোপন করে সাধারন – অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে নিজেদের সাবেকি সামাজীক প্রভাব ও প্রতিপত্তিকে পুঁজি করে বিনাদলিলে বা বায়না পত্র দিয়ে দখল বিক্রি করতে থাকে।

শত শত মানুষ তার এসব জালিয়াতির শিকার।বছরের পর বছর তার সকল অপর্কমই থেকে গেছে ধরাছোয়ার বাইরে।তিনি নিজে কোন ধরনের চাকুরী বা ব্যবসার সাথে জড়িত নন।তবে প্রতারণা করে একই জমি বারবার বিক্রী করা সহ,দখল বাণিজ্য করা তার পেশা।

বিভিন্ন এলাকার পেশাজীবী প্রতারক,সন্ত্রাসী সে লালন করে।জানা গেছে,ভুমিদস্যু মখছুছ চৌধরী মাঠ পর্যায়ের জরিপ করতে আসা সার্ভেয়ারদের খাতির যত্ন করে নিজ বাড়ীতে রেখে অন্যের জমি নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছে।

তাদের পূর্বসুরীরাও নাকি এসব কাজে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।রীতিমত তিনি নিজ এলাকাসহ আশ-পাশ গ্রামের অসহায় মানুষদের জিন্মি করে তাদের জমি নিজের নামে হাতিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয় অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, জৈন্তাপুর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে একই জমি কয়েকবার বিক্রি করে প্রতারনার অভিযোগ করা হয়েছিলো এবং মুচলেকা দিয়ে সে সমাধান করে তবেই ছাড়া পেয়েছে।

এছাড়াও আরো অভিযোগ জমা আছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সি আর,জি আর এবং নন জি আর মামলা আদালতে চলমান আছে।

জানা গেছে, মডেল থানার সাবেক সিনিয়র এস আই আব্দুল আজিজ এব্যাপারে তদন্ত ও তদারকি করেছেন এবং বর্তমানে সিনিওর এস আই কাজী শাহেদ তদন্তে আছেন।পরবর্তী খবরে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী তারা জানান,কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেছে মখছুছ বলে’ভুমি মন্ত্রণালয় সহ সিলেটের সব ভূমি অফিসে আমার নিজস্ব মানুষ আছে ।

বেশি ঝামেলা করলে যেটুকু আছে তাও থাকবেনা।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী একজন জানান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) অফিসের স্মারক নং 708/1(17) তারিখ 25-8-2008 ইংরেজির নথি তালাশ করলে সরকার কর্তৃক মখছুছ চৌধুরী ও তার পরিবারের বাজেয়াপ্ত ভুমির তালিকা পেয়ে যাবেন,আর ভুক্তভোগীদের তার দেয়া কাগজ যাচাই করলেই তার প্রতারনার হিসাব পেয়ে যাবেন।

জানা গেছে সাম্প্রতিক ভুমি বাজেয়াফতের আদেশ নিয়ে সরকারের সাথে তারা দুটি মামলাই হাইকোর্টপ হেরে গেছে এবং বাজেয়াফতের আদেশ বহাল হয়েছে।

সম্প্রতি ২৭/৪/২০২২ ইং তারিখে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন একই এলাকার মৃত সামছুদ্দিন আহমদ খন্দকারের পুত্র খন্দকার সফিউল ইসলাম।

তিনি জানান ২০১০ সালের চুক্তিতে আমাদের মৌরসী ভূমিতে একটি স্কুলের জন্য বার্ষিক ১ লাখ টাকা করে ভাড়ায় ১০ বছর মেয়াদে কিছু ভূমি নেন।

শর্ত ছিল যে, নিজে ১০ লাখ টাকা খরচে বিল্ডিং বানাবেন এবং বার্ষিক এক লাখ টাকা হারে কেটে ১০ বছরে তা ১০ লাখ হবে। পরে মেয়াদান্তে বিল্ডিং এবং মালিকানা আমাদের হবে এবং নতুন চুক্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হবে।

২০১১ সালে তিনি তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তি করে দ্বিতীয় তলা বানানের কাজ শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে নিজে ভূমির মালিক বলে দাবি করেন।

এ নিয়ে একাধিকবার তার কুট-কৌশলী জরিপ ও প্রভাবের কারণে তার সাথে পেরে উঠিনি। প্রিন্ট পর্চা এলে জরিপ আহবান করেছি।

নানা টালবাহানার পর ৩ মাসে ৪ জন সার্ভেয়ার মোট ৬ বার জরিপ করে আমার ০.২৫০ শতকের মালিকানা আছে বলে রায় দেন।সালিশানদের বারবার উপেক্ষা করলে আমি থানায় অভিযোগ দেই।

তাকে থানায় হাজিরের নির্দেশ দিলেও সে তা মানেনি বরং উল্টো আমাকে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।তিনি আরও বলেন আমি ও আমার পরিবারের লােক শান্তি প্রিয় ও নিরীহ আইনমান্যকারী।

বিবাদী অত্যন্ত খারাপ সন্ত্রাসী, ভূমি খেকো ও সন্ত্রাসীদের গড়ফাদার লােক বটে বিবাদীর সাথে আমার পূর্ব হতে জায়গা জমি নিয়ে বিরােধ রহিয়াছে।

আমার মৌরসী স্বত্ত্ব যা আমাদের নামে রেকর্ডভূক্ত আছে। সন্ত্রাসী বিবাদী ও তার গ্রুপের লােকজন দীর্ঘদিন হতে ভূমি জবর দখলে আছে।

তারা এলাকায় দীর্ঘদিন হতে বিভিন্ন রকমের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটায়, লােকজন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেনা।সে আমার মালিকানাধীন জায়গার দখল বিক্রি করার পায়তারা করছে জানতে পেরে সালিস বিচার ও জরিপ করে ও পরবর্তীতে সালিসি বিচারে আমার নিজ স্বত্ব হিসাবে দাবী প্রতিষ্ঠিত করি।

কিন্তু বিবাদী না মেনে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করিতে থাকে এবং তাহার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার উপর বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

এই বিষয়ে তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জনাৰ ওমর ফারুক মােড়ল অবহিত আছেন।

আমি সিলেট প্রেস ক্লাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং সিলেটের দৈনিকগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। এসব কারণে সে আমার উপর ক্ষীপ্ত আমাকে আজ পর্যন্ত বহুবার হুমকি দিয়া বলেছে যে,

এই বিষয়ে আর বাড়াবাড়ি করলে আমাকে প্রানে মেরে ফেলবে এবং পরিবারের জানমালের ক্ষতি সাধন করবে;এমনকি আমার ছোট সন্তানদের গুম করে ফেলবে।

বিবাদী ইতাে মধ্যে আমাকে মিথ্যা সাজানাে চাদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বিবাদীর এমন কর্মকান্ডে আমি এবং আমার পরিবারের লােকজন মারাত্বক নিরাপত্তাহীনতায় ভােগছি। আমরা আশংকা করছি যে,বিবাদী যে কোন সময় আমাদের জানমালের সমূহ ক্ষতি করিতে পারে।বিগত ২৭/০৪/২০১২ইং রাত আনুমানিজ ১১.০০-১১.৩০ মিনিটের সময় তারই আপন ছােট ভাই মাসুদ রানা চৌধুরী একটি ভূমির লেনদেন কর্মকান্ডে আমাকে জনৈক দেলােয়ার হোসেন এর একটি খালি অফিস ঘরে সাক্ষী হিসেবে নেয়।

কথােপকথনের প্রাক্কালে তারই আপন ভাই জানায় তফসিল বর্ণিত ভূমি স্থায়ী ভাবে জবর দখলের জন্য আমাকে প্রানে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে এবং আমাকে যে কোন সময় হত্যা করে লাশ গুম করতে পারে।

উক্ত সংবাদের সত্যতা এই যে,তাহার ভাইয়ের বক্তব্যের অডিও রেকর্ড আমার মােবাইলে সেইভ করা আছে।

এই সংবাদ জানার পর আমি এবং আমার পরিবারের লােকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছি এবং আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছিনা।

আমি এবং আমার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এই জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযােগ জমা দেই।

এব্যাপারে জানতে মখছুছ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয় অস্বীকার করে বলেন আমার ভাই রাতে নেশা করে সারাদিন ঘুমায়,তাকে জোর করে তার কাছে থেকে কাগজে স্বাক্ষর রাখতে চেয়েছিলেন রাসেলগং।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন