সিলেটে অনলাইন প্লাটফর্মে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলো একটি চক্র। সেই চক্রে পুরুষের পাশাপাশি আছেন নারীও। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে পণ্য বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেই চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সিলেটে সেই চক্রের মূল হোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন-চক্রটির মূল হোতা আয়েশা সিদ্দিকা (২০)আয়েশার স্বামী আব্দুল আল মোমেন বাক্কার (২৬)ওসমান গনি সরোয়ার (২৩) মো.বাবর আলী শেখ(২৫) ও মো.মেহেদী হাসান (১৭)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন এবং ৭টি সিম উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি সোমেন মজুমদার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কারসাজির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে অর্থ আত্মসাত করার বিষয়টি র্যাবের নজরে আসে। জানা যায়,
বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে সাধারণ জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে চলছে প্রতারণা। ফলে অনেক মানুষ সরল বিশ্বাসে প্রতারিত হচ্ছেন।
সোমেন মজুমদার আরও জানান, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর নগরীর বাসিন্দা ডাক্তার নিষ্ঠা চক্রবর্তী সিলেট জালালাবাদ থানায় “চারু নিকেতন” নামক স্বর্ণ বিক্রির একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করে সাধারণ ডায়েরি করেন। পাশাপাশি তিনি র্যাব-৯ এর কাছেও অভিযোগ করেন।
অভিযোগটি পেয়ে র্যাব-৯ আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে। অত্যন্ত কৌশলী এবং অনলাইন কার্যক্রমে পারদর্শী এই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দীর্ঘ সময় এই নিয়ে গোয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে ৩০ এপ্রিল (শনিবার) র্যাব-৯ এর একটি বিশেষ দল চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকার বাকলিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতাসহ এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, আয়েশা সিদ্দিকা এই পেইজের এডমিন এবং বাকি আসামিরা তারা সহযোগী।
এছাড়াও আরও কয়েকজন এ চক্রের সাথে যুক্ত আছেন। আয়েশা সিদ্দিকা মূলত Next Your Shopping নামক একটি অনলাইন পেইজের মাধ্যমে কাপড় বিক্রি করতেন। কিন্তু ছয় মাস আগে তিনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে ‘চারু নিকেতন’ নামক স্বর্ণ বিক্রির পেইজ ওপেন করেন। তার এই পেইজের বর্তমান ফলোয়ার্সের সংখ্যা সাত হাজারের অধিক। কম দামে এবং কিস্তিতে আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্বর্ণের গহনার পোস্ট দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন।
ক্রেতারা পেইজে নক করে বিস্তারিত জানতে চাইলে বলা হতো- গহনা কিনতে হলে অ্যাডভান্স ৫০% টাকা বিকাশ করতে হবে।
অ্যাডভান্স বিকাশ করা সম্পন্ন হলে এই প্রতারকরা নিতো আরেক প্রতারণার আশ্রয়।
ভুয়া কুরিয়ার স্লিপের ছবি পাঠানো হতো ক্রেতাদের মেসেঞ্জারে। এরপর যখন দেরি হতো তখন এই প্রতারক চক্র আরও টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য টালবাহানা করত।
অবশেষে ভুক্তভোগী ক্রেতাকে ম্যাসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে ব্লক করে দিত এই প্রতারক চক্র। সরল বিশ্বাসে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া এ পর্যন্ত ২৫০ থেকে ৩০০ ব্যক্তির নিকট থেকে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
র্যাব জানায়,“চারু নিকেতন”নামক একটি জুয়েলারি শপ-এর প্রকৃত অবস্থান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানা এলাকায়।
এই জুয়েলারি শপ-এর মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি অনলাইনে স্বর্ণ বিক্রির কোনো ফেসবুক পেজ চালান না এবং প্রতারিত হওয়া অনেক ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত অধরা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন