নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট নগরীতে কিছুতেই থামছে না ভারতীয় শিলংতীর জুয়া, বন্ধ হচ্ছে না ভারতে অর্থপাচার। তীরজুয়ার মাধ্যমে প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেট থেকে ভারতীয়রা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ টাকা। মাঝেমধ্যে আইওয়াশ অভিযানে কিছুসংখ্যক চিছকে ও ক্ষুদে জুয়াড়ী ধরা পড়লেও রাগব বোয়ালরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তারাই জুয়া আইনের ফাক বের করে আনে ধৃত জুয়াড়ীদের। কিছু দিন আগে রাতে নগরীর দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ৫ জুয়াড়িকে আটক করে।
তারা হচ্ছে- মো. রাসেল, রবিন্দ্র কুমার দেব ওরফে রবি,মো. সেলিম, মো. সুমন ও লক্ষন দাস। জুয়া আইনে তাদের কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে।জুয়া আইনের পাশপাশি এদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে জীর জুয়াড়ীদের ব্যবস্থা নেওয়া হলে শিলংতীর জুয়া অনেকটা নিয়ন্ত্রনে আসবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
সিলেট নগরের কালীঘাটে, বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ার সংলগ্ন মেথরপট্টির সামন, বাগবাড়ি, প্রভৃটি এলাকায় টোকেন ও মেবাইল নেটের মাধ্যমে বসে তীরজুয়ার জমজমাট ডিজিটাল আসর। জুয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত টাকা সিলেটের এজেন্টরা ইংল্যান্ড অথবা অন্য কোন দেশের মাধ্যমে বিভিন্ন পন্থায় মানি লন্ডারিং করে ভারতের শিলং-এ প্রেরণ করে থাকে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে ৩০ বছর আগে ভারতীয় ধনকুবেররা এ রকম খেলাটি আবিষ্কার করেছিল। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’। এই শিলং তীর খেলাটির নিয়ম হচ্ছে এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে ০-৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিক্রয় করা হয় ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো মূল্যে।
লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হয়। যত মূল্যে সংখ্যাটি বিক্রয় করা হয় তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হয় বিজয়ী নম্বরকে। অর্থাৎ, ১০ টাকায় ৭০০ টাকা।
একই নম্বর এশাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাওয়ার লোভে এই শিলং নামে জুয়ায় বাজি ধরছেন। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় ও রাত সাড়ে ১০টায় এ লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
খেলার ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। ভারতের শিলং থেকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। আর এ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনেও ফলাফল জানা যাচ্ছে। আর এসব জুয়ার নেতৃত্বে রয়েছে এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এনড্রয়েড ফোন সেটের মাধ্যমে নম্বর বইয়ের মালিকরা দেখান ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে নম্বর টোকেন বিক্রি করেন।
অভিযোগে প্রকাশ, নগরীর কালীঘাট বস্তাপট্টি মার্কেটের দুতলায় দিনে বসে শরীফের তীরখেলার আসর। আর রাতে এই জায়গায় বসে ঝান্ডু-মান্ডু জুয়ার আসর। এই জুয়ার বোর্ড বসিয়ে দিনমজুর থেকে অনেকে হয়ে উঠেছেন কোটিপতি। পাশাপাশি জ্ঞাতআয় বহির্ভুত টাকা কামাই করছে এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ। আর যারা এই জুয়া খেলতে আসে তারা হারাচ্ছে সর্বত্র।
অনেকেই সব কিছু হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে। এমন কর্মকান্ড দেখে স্থানীয়রা বাকরুদ্ধ। শরীফ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা ভারতের শিলংয়ে প্রেরণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নগরের কালীঘাটের শরীফের বোর্ডে দুটি চেয়ারে বসে তার কমিশন পার্টনার বড় জামাল ও ছোট জামাল। তীরজুয়া খেলতে সারি বেঁধে আসছেন নানা পেশার লোকজন। বড় জামাল ও ছোট জামাল তাদেরকে ১০,২০,৫০,১০০ ও ৩০০ টাকার বিনিময়ে একটি টোকেন দেয়। কেউবা একাধিক টোকেনও নিয়ে থাকে।
এমনকি কেউ কেউ একসাথে ২০টি টোকেনও নিচ্ছেন। এ যেন কোনো যানবাহনের অথবা চিকিৎসকের টিকিট না, এই টোকেন হচ্ছে শিলং তীর খেলার। তীর খেলার ফল প্রকাশের পর শরীফের বের্ডে রাতে বসে ঝান্ডু-মান্ডু জুয়া আসর। দল বেধেঁ জুয়াড়িরা ঝান্ডু-মান্ডুর খেলেন।
এই জুয়ার বোর্ডের নেতৃত্ব দেয় ছাত্রদলের শরীফ আহমদ। কালীঘাটের বস্তাপট্টি বোর্ডে দিনের বেলা তীরখেলা পরিচালনা করে শরীফের সহযোগী পার্টনার বড় জামাল ও ছোট জামাল। আর রাতে ঝান্ডু-মান্ডু জুয়ার আসর বসায় শরীফের সহযোগী মাছুম, ছেন্টু ও মঞ্জু।
কালীঘাটের জুয়ার বোর্ডর মালিক শরীফ ৫ বছর আগে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। কিন্তু জুয়ার বোর্ডের অবৈধ টাকায় অল্পদিনেই সে কোটিপতি। নগরীতে রয়েছে তার ৩ তলা বাসা, রয়েছে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি। শ্রমজীবি মানুষরা লোভে পড়ে এই জুয়াখেলে। আর তারা এরকম ধান্দাবাজী করে গরীবের ধন হাতিয়ে নিয়ে বিলাশবহুল জীবন যাপন করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু অসৎ পুলিশ জুয়ার বোর্ড মালিক শরীফের কাছ থেকে অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়াই এই শিলং নামে তীরজুয়া কিছুতেই থামছে না। যার ফলে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অভিযানে মাঝে মধ্যে তীর খেলা বন্ধে অভিযান চললেও কোনো সুফল মিলছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে কালিঘাট এলাকায় শিলং তীর এবং ঝান্ডুু-মান্ডু খেলার উৎপাত দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ এলাকায় প্রকাশ্যেই শিলং তীর খেলার টোকেন বিক্রি হওয়ায় নারী-পুরুষ দল বেঁধে এই তীর নামক জুয়া খেলায় লাভের আসায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে।
লাভতো দূরের কথা প্রতিনিয়ত এসব খেলে অনেকেই নি:স্ব হচ্ছে। আর ভারতীয় এ ভাগ্য খেলায় স্কুল-কলেজের ছাত্র, দিনমজুর, রিকশাচালক, যানবাহন চালক-শ্রমিকসহ বেকার যুবকরা বেশি অংশ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির টুআইসি এসআই সাজিদুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, আমার থানা এলাকায় কোন তীরজুয়ার বোর্ড আছে বলে আমার জানা নেই। এই জুয়া খেলার বিরুদ্ধে আমরা সব সময় কঠোর। কার কাছে এ ধরনের খবর থাকলে জানাবেন। তীর জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন