নিজস্ব ডেস্ক : বগুড়ার যুবক আশরাফুল আলম সাঈদ। যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার কাছে হিরো আলম নামে পরিচিত। অভিনয়, প্রযোজনা কিংবা গান- সবকিছুই নিজের ইচ্ছে মতো করে আলোচনায় এসেছেন গত কয়েক বছর আগে। তবে সেই হিরো আলম এবার আসছে সিলেটের গোয়াইনঘাটে। এখানে সবার ভিতরে কৌতূহলের সৃষ্টি হলো সেই আলোচিত হিরো আলম কেন আসছেন সিলেটের গোয়াইনঘাটে?তবে কোনো অভিনয় বা প্রযোজনা কিংবা গানের জন্য নয়- আসছেন একটি খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে।
জানা গেছে- আসছে আগামী ২১ জানুয়ারি গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ি সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিতব্য একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে হিরো আলমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ খেলার প্রচারণা পোস্টারে তাকে ওই অনুষ্ঠানের ‘প্রধান আকর্ষণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।হিরো আলম সিলেটে আসার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন খেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ইমরান আহমদ। তিনি আরো বলেন- হিরো আলম ওই দিন বিকেলে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে-মধ্যেই সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয় হন হিরো আলম। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার অদ্ভূত সব ভিডিও, ছবি কিংবা গান। গত ৭-৮ বছর থেকেই তিনি এভাবে আলোচনায়। কিন্তু কে এই হিরো আলম?
একসময় সিডি বিক্রি করতেন আশরাফুল আলম। সেটা বেশ আগের ঘটনা। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার। ভাবলেন নিজ গ্রামেই সেটা করবেন, এবং করে ফেললেন। বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়া গ্রামেই শুরু হয় আলমের ডিশ ব্যবসা।
ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সাথে চলা আলমের পরিবার তাকে আরেক পরিবারের হাতে তুলে দেয়। আলম চলে আসেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাসায়। আব্দুর রাজ্জাক তাকে ছেলের মতো করেই বড় করে তোলেন। স্নেহ করতেন। কিন্তু গ্রামে অভাব তো প্রায় মানুষের আছে। আলমের পালক পিতা আব্দুর রাজ্জাকের সংসারও অভাবের ছোঁয়া পায়। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আলমকে নেমে পড়তে হলো জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। সিডি বিক্রি থেকে আলম ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন। তার মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু মাঝে-মধ্যেই মনোমালিন্য হয় স্ত্রীর সঙ্গে। আর সেটি আসে গণমাধ্যম পর্যন্তও।
সিডির ব্যবসা করার সময় আলম ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে মাথায় ঢোকে মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের সাথে মডেলিং। সেটাই ছিল শুরু। এরপরে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সংসারে মনোযোগী হন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত। তাদের সংসারে আসে নতুন দুই অতিথি। নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রাখেন সন্তানদের নাম। পুত্র আবির ও কন্যা আলো। এখন সংসার আর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত আলম। পাশাপাশি নিজে কিছু মিউজিক ভিডিও করেন। সেগুলো নিজের ক্যাবল চ্যানেলেই প্রচার করেন। গ্রামের মানুষসহ ভার্চুয়াল জগতের তার ভক্তরা তাকে বাহবা দেন। তাতে আলম উৎসাহ পান।
হিরো আলম বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। কিন্তু কাগজপত্র জাল হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকার গানের নিজস্ব ভার্সন ইউটিউব আর ফেসবুকে আপলোড করে একের পর একের আলোচনায় আসতে থাকেন হিরো আলম। সর্বশেষ তিনি তুরস্কের বিখ্যাত ‘আইসক্রিম’ গানটি তার নিজস্ব পদ্ধতি ও ভাষায় গেয়েছেন। এটি প্রকাশও হয়েছে তার চ্যানেলে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন