• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

খাদিমপাড়ায় প্রশাসনের অন্ধত্বের ফলে বন্ধ হচ্ছেনা মাটি হরিলুট

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
খাদিমপাড়ায় প্রশাসনের অন্ধত্বের ফলে বন্ধ হচ্ছেনা মাটি হরিলুট

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দাসপাড়া বালিটিকর-বংশীধরের হাওরে ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি জমি ও ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে (মাটি ব্যবসায়ী) ভূমিদস্যুরা।

একনাগাড়ে চলছে দিনে-রাতে ২৪ (ঘন্টা) অবৈধভাবে সরকারি জমি নষ্ট করে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির মহোৎসব। কৃষি জমি কেটে বানানো হচ্ছে গভীর পুকুর।

এদিকে, একের পর এক কৃষি জমি থেকে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা, আবার অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণও। আর আবাদি জমির মাটি কেটে জমি নষ্টে সহায়তা করছে এসব ভূমিদস্যুদের একটি প্রভাবশালী অসাধু চক্র।

স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে- সরকারি খাস ১নং খতিয়ানের সর্বানন্দ মৌজা, জেল নং- ৬৮, দাসপাড়া বালিটিকর-বংশীধর গ্রামের হাওরে কয়েকটি দাগে মাকুলী, বুরাঘাট, ডুকলাউনি, হাতুলি ও জলমহালে প্রায় (৩০০ কিয়ার) এর অধিক সরকারি জমি রয়েছে। এই মৌজার সরকারি বিভিন্ন দাগের জমি থেকে মাটি বিক্রি করছে- দাসপাড়া এলাকার মরহুম রফিক মিয়ার পুত্র চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া উরফে (লেংরা বাবুল) এর নেতৃত্বে দাসপাড়া বংশীধর এলাকার মোঃ জামাল মিয়ার পুত্র মাটি ব্যবসায়ী তারেক আহমদ, তুরুবাগ এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু রিপন আহমদ ও দাসপাড়া এলাকার মাটি ব্যবসায়ী এনামুল হক কুটিসহ ১৫/২০ জনের একটি বেশ বড়সড় মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আর তাদের শেল্টারদাতা নৈপথ্যের নায়ক হিসেবে রয়েছেন খাদিমপাড়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও বলে অভিযোগ প্রকাশ স্থানীয়দের। প্রশাসনের অন্ধত্বের ফলে খাদিমপাড়ায় বন্ধ হচ্ছে না মাটি হরিলুটের মহোৎসব বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে ওঠে আসে- গত দুই বছরে এই (মাটি ব্যবসায়ী) ভূমিদস্যু চক্র সর্বানন্দ মৌজার ৩০২৮ নং দাগের প্রায় ১১ একর সরকারি জমির মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আর গত নভেম্বর মাসে একই মৌজার ৩০০৩ নং দাগের প্রায় ৮ একর সরকারি জমির মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে চলতি মাস মানে ডিসেম্বর মাসে একই মৌজার সরকারি ব্যুরো ক্ষেতের জমি ৩০১৫ নং দাগের ৪৩ একর ৩৫ ডিসিমেল ও একই মৌজার ৩০১৭ নং দাগের সরকারি খালের ১ একর ৪০ ডিসিমেল জমির মাটি বিক্রি চালাচ্ছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। এই (মাটি ব্যবসায়ী) চক্র সরকারি জমির মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকশত কোটি টাকা। শুধু যে তাদের পকেটে ভরছে তা নয় তাদের সাথে সাথে পকেট ভারী হচ্ছে স্থানীয় কিছু সরকার দলীয় লোক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশ পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সহ স্থানীয় কিছু অসাধু সাংবাদিকদেরও। যার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে অনেকে নারাজ। আর তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন হামলা ও মিথ্যা মামলার। যার জন্য এ ব্যাপারকে অনেকে অযথা একটা ঝামেলা মনে করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে- সরকারি আবাদি জমিতে প্রায় (৬টি এক্সেভেটর ভেকু) মেশিন ও ১০ চাকার প্রায় (৩৬টি বড় ড্রাম ট্রাক) দিয়ে এই চক্র মাটি কেটে পুকুর তৈরি ও জমির মাটি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির দৃশ্য। এ বছরে গত দুই মাস যাবত প্রতিনিয়ত চলছে মাটিকাটা ও বিক্রির মহোৎসব। আর এই মাটি ব্যবহার হচ্ছে- সমতল ভুমি ভারটে, পুকুর-ডোবা ভরাটে ও বসতবাড়ি নির্মাণসহ নানা রকমের প্লট ভরাটে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন- আজ থেকে দুই বছর আগে মাটি ব্যবসায়ী তারেক আহমদ সর্বানন্দ মৌজার বর্ণিত দাগের সরকারি কিছু জমি সিলেটের ডিসি সাহেব ও সিলেট সদর উপজেলার (টিএনও) সাহেব এর নিকট হইতে ৬ বছর মৎস্য চাষের জন্য লিজ আনে। কিন্তু সে মৎস্য চাষে লাভবান হতে না পেরে বর্ণিত ওই মাটি ভূমিদস্যু চক্রের সাথে মিলিত হয়ে লিজের নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে সরকারি জমি থেকে অনায়াসে মাটি বিক্রির মহোৎসব চালাচ্ছে। যার কারণে প্রতিবছর নষ্ট সরকারি জমি ও ফসলি জমি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রান্তিক চাষীরা জানান- ‘মাঠের মধ্যে পুকুর খনন করায় নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। পুকুর খননের নামে মাটি কেটে বিক্রি করার জন্য মাটি বহনের কাজে ব্যবহারিত গাড়িগুলোর চলাচলে নষ্ট হচ্ছে অন্যন্য আবাদি জমি। বিক্রেতা ও ক্রেতারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কোনোভাবেই মাটিকাটা বন্ধ করতে পারছি না। তাই আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে মাটি বিক্রি ও আবাদি সরকারি জমির মাটি বিক্রির এই তান্ডবলীলা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে সরকারি জমিতে পুকুর খনন করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে মাটি বিক্রি করছে এই সিন্ডিকেট। অন্যদিকে ১০ চাকার বড় বড় ট্রাক দিয়ে মাটি আনা-নেওয়ার ফলে খননকৃত পুকুরের আশেপাশের অধিকাংশ ফসলি জমি ও গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া উরফে (লেংরা বাবুল) সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সরকারি জমি থেকে মাটি বিক্রির অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘জমির মালিক আমি নিজে এখানে সরকারি কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি প্রতিবেদককে তার সঙ্গে টিলাগড়ের একটি অভিজাত হোটেলে দুপুরের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। প্রতিবেদক তার আমন্ত্রণে অনিচ্ছুক হলে তিনি হুংকার দিয়ে প্রতিবেককে বলেন আমি কে তুমি কি আমাকে চিনো, আমি কে জানো। প্রতিবেদক তার প্রশ্নের জবাবে বলে আপনি যেই হন তা আমার দেখার প্রয়োজন নেই আপনি আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন বললে তিনি ফোন কেটে দেন।

এরপর, এই প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য তথ্য সংগ্রহকালে আবার শুরু হয় এক আজব কর্মকান্ড যার জন্য হয়তো প্রতিবেদক মুটেও প্রস্তুত ছিলেন না। মাটি ব্যবসায়ী লেংরা বাবুলের সাথে আলাপের কিছুক্ষণ পর স্থানীয় এক সাংবাদিক প্রতিবেদকের মুঠোফোনে ফোন করে প্রতিবেদন টা না করা জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন মাটি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া উরফে (লেংরা বাবুল) সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলয়ের কর্মী। আপনার যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে বলেন। প্রতিবেদক তাতেও অপারগতা দেখালে তিনি বলেন আরে লেংরা বাবুলের জন্য সিলেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র সাংবাদিক না কি প্রতিবেদককে ফোন দিতে পারেন বলে ভয়ভীতি দেখান। তার শত ভয়ভীতিকে পাত্তা না দিয়ে প্রতিবেদক তার নিজস্ব গতিতে আগাতে থাকেন।

এরপর প্রতিবেদক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের ওই সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে মাটি ব্যবসায়ী লেংরা বাবুলের আসলে কোন সম্পর্ক আছে কি না জানার জন্য উনার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নে আমার কোন আত্মীয়স্বজন নেই আর আমি মাটি ব্যবসায়ী লেংরা বাবুল নামে কাউকে চিনি না। আপনি এই ব্যক্তির ফটো সহ প্রতিবেদন তৈরি করেন আর প্রতিবেদনটা আমাকেও দিয়েন আমি আমার পত্রিকায় প্রকাশ করবো। আজব রে ভাই আমি চিনি না জানি না আর আমার নাম ব্যবহার করে আমার মিডিয়াঅংঙ্গনের সাংবাদিক ভাইদের ভয়ভীতি প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও তিনি প্রশাসনের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এরপর আবার হঠাৎ মাটি ব্যবসায়ী লেংরা বাবুলের ব্যবহৃত নাম্বার থেকে প্রতিবেদকের নাম্বারে ফোন আসলে প্রতিবেদক রিসিভ করলে লেংরা বাবুল বলেন- আপনার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমার দাসপাড়া বাজারের অফিসে চলে আসুন। প্রতিবেদক কোন কিছু বলতে কি? এমন প্রশ্ন করলে মাটি ব্যবসায়ী লেংরা বাবুল আমতা-আমতা করে বলেন না আরকি কোন তথ্যের দরকার হলে চলে আসুন। তাতেও প্রতিবেদক অনিচ্ছুক জানালে তিনি বলেন আরে যা যা নিউজ করে আমার যা করতে পারিস কর বলে হুংকার দিয়ে ফোন রেখে দেন।

এস্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ- এভাবে মাটি কাটার বিষয়গুলো একের পর এক স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে এসব মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যার কারণে বন্ধ হচ্ছে না সরকারি জমি ও কৃষি জমি নষ্ট করে মাটিকাটা বা মাটি বিক্রির মহা তান্ডবলীলা।

এ ব্যাপারে সিলেটের কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তারা জানান- এভাবে সরকারি জমি ও কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বা কৃষি জমিতে পুকুর করার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কোনো ব্যক্তি নিজের জমিতেও এই কাজ করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ এমরান হোসেনের ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন কেটে দেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন