• ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৪নং খাদিমপাড়ায় মাটি খেকোদের তান্ডব লীলা : নীরব কর্তৃপক্ষ!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২২, ২০২১
৪নং খাদিমপাড়ায় মাটি খেকোদের তান্ডব লীলা : নীরব কর্তৃপক্ষ!

বিশেষ প্রতিবেদকঃ সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৯নং ওয়ার্ডের পীরের বাজার হাতুড়া চুয়াবহর এলাকায় কোনভাবে থামানো যাচ্ছে না সরকারি জমি ও ফসলি জমিতে মাটি কাটার তান্ডব লীলা।

বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে চিহ্নিত প্রভাবশালী একটি মাটি খেকো চক্র দেদারছে মাটি কেটে বিক্রি করলেও কোন আইনি পদক্ষেপ নেই বললে চলে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশের। অজ্ঞাত কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনমনে ক্ষোভের ঝড় বইছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই মাটি খেকোরা চালিয়ে যাচ্ছে এমন তান্ডব লীলা বলে অভিযোগ প্রকাশ সচেতন মহলের।

সরজমিন দেখা যায়- চৌয়াবর বটেশ্বর মৌজায়- (১০৯২, ১০৭৮, ১০৬৩ ও ২১১২) নং দাগে সরকারি খাস জমি রয়েছে প্রায় ৮১.৫৫ একরের অধিক।

আর উক্ত দাগের জমি গুলো হচ্ছে-বেড়া চাপড়া বিল, বেড়া চাপড়া নালা,হাতুড়া খাল,মেলান বিল,আন্দু খাল ও হাড়ি চাপড়া বিল।আর উক্ত দাগগুলোর আশপাশের দাগে রয়েছে মালিকানাধীন কিছু ফসিল জমি।

স্থানীয় একটি চিহ্নিত মাটি খেকো চক্র নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি খাস জমি ও কিছু মালিকানাধীন জমি থেকে তাদের ক্ষমতাবলে প্রায় ৩টি এক্সেভেটর (ভ্যাকু) ও প্রায় ৩০ টি ছোট-বড় ড্রাম ট্রাক দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।

প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস যেনও কারো নেই। সব মিলিয়ে তাদের অনেক দাপট যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে অনেকে নারাজ। আর কেউ প্রতিবাদ করলে হতে হয় বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও হামলার সম্মুখীন।

মাটি খেকোরা সরকারি খাস জমি ও মালিকানা জমির টপসয়েল কেটে ড্রাম ট্রাক দিয়ে অনায়াসে প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।

আর প্রশাসন তা দেখেও না দেখার তালবাহানা করছে। যার ফলে সরকারি ও ফসিল জমি কেটে মাটি ব্যবহার হচ্ছে- বাড়ি নির্মাণ, ডোবা ভরাট, প্লট ভরাট, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে। ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি খননের ফলে অনেক জমি এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর সরকারি খাস জমির শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে।

যার কারণে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে। তাছাড়া এই চক্র প্রতিবছর কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই অবৈধ টাকার ভাগভাটোয়ার পাচ্ছেন প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারাসহ একই সঙ্গে পকেটভারী হচ্ছে স্থানীয় কিছু অসাধু সাংবাদিকদেরও। তবে পুলিশ এসব অস্বীকার করে বলছে ভিন্ন কথা।

শুধু রাতে নয় এখন দিনেও কেটেও সাবাড় করা হচ্ছে সরকারি জমি ও ফসলি জমি। তবে হাতুড়া এলাকায় রাতের সময়কে উত্তম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে মাটি খেকো চক্র। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান,সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় বা ভূমি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কর্তন বা মোচন করা নিষিদ্ধ।

স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে- চোয়াবর বটেশ্বর মৌজায় সরকারি জমি ও ফসলি থেকে মাটি বিক্রির তান্ডব লীলা চালাচ্ছে- হাতুড়া এলাকার, মরহুম বশির উদ্দিনের পুত্র রাজিব উদ্দিন, মরহুম সাজ্জাদ আলীর পুত্র কামাল উদ্দিন উরফে (ফারা কামাল), মরহুম রিয়াছত আলীর পুত্র সাবেক মেম্বার এমান, আতাউর রহমান কুটুর পুত্র ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজান উদ্দিন প্রিন্স উরফে, মরহুম ফরিজ আলীর পুত্র সুহেল আহমদ উরফে (মাটি সুহেল), মরহুম আব্দুর রহমানের পুত্র রহমত আলী উরফে (মাটি রহমত) সহ ২০/২৫ জনের একটি চিহ্নিত মাটি খেকো চক্র।

এই চক্র নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমি নষ্ট করে অবাধে চালাচ্ছে মাটি কাটার মহোৎসব। আইন প্রয়োগকারী সদস্যকে ম্যানেজ করে এই চক্র প্রতিনিয়ত রাতে বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছে ফসলী জমি নষ্টের মত পরিবেশ বিধ্বংসী অপকর্ম।

এ ব্যাপারে এই চক্রের কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান,আমরা দিয়ে চলছি। প্রশ্ন কি? দিয়ে চলছেন কাকে দিচ্ছেন। তখন তৎমত খেয়ে আমতা-আমতা করে বলেন টাকা দিয়ে চলছি, আর যাকে দেওয়ার তাকে দিচ্ছি। কিভাবে দিচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন সপ্তাহে দিয়ে চলছি। এর বেশি জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দিতে নারাজ।

এই মাটি খেকো চক্র যেখানে মাটি কাটছেন শুধু যে ঐ জায়গাটা নষ্ট হচ্ছে তা নয়, বরং চারপাশের ফসলি জমির মাটি ধসে পড়ে ক্ষেতের অনুপযোগী হয়ে উঠছে মূল্যহীন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি জায়গা। অনেক ভূমি মালিকরা অভিযোগ করলেও কেউ তাদের পাত্তা দিচ্ছে না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে অবাধে মাটি কাটার কাজ। এই মাটি খেকো চক্র শুধু আইনের সদস্যদের নয়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের লোক বুঝে বুঝে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখছেন।

দুই একজন সচেতন মহল জোড়ো হয়ে কথা বললে তাদেরকে উল্টো বুঝানো হয়, মাটি কাটার মাধ্যমে কিছু মানুষ যে কাজ করে খেতে পারছে এইটাই বড় কথা, বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। অনেকে এটাকে ক্ষতির কারণ মনে করলেও বাড়তি একটা সমস্যা মনে করে অনর্থক সমস্যায় নিজেকে জড়াতে চান না।

স্থানীয় একাধিক লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- এই মাটি খেকো চক্র একটি সংঘবদ্ধ দলে পরিণত হয়েছে। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাত করে তাদের ছত্রছায়ায় চলে বিধায় তাদের সাথে কথা বলে পারা যায় না। তারা বলেন- এই মাঠি খেকো চক্র তাদের রাখা জমি কাটার পাশাপাশি সরকারি জমিসহ অন্যের জমির মাটিও কেটে নেয়, তাতে অনেক সময় বাকবিতণ্ডা বাজে। শেষমেষ স্থানীয় ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। এমন কি? কেউ মাটি বিক্রি করতে না চাইলে তাকে বড় অঙ্কের টাকার লোভ দেখানো হয়।

তারা আরো জানান- মাটি কাটার গাড়ি আনার সময় এলজিইডি সড়কের সকল বিটুমিন রাস্তার উপর দিয়ে এস্কেভেটর মাটির ড্রাম ট্রাক দিয়ে যত্রতত্র রাস্তার সোল্ডার নষ্ট করা হচ্ছে। আর তাদের মাটি বহনে ড্রাম ট্রাকগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচলের ফলে প্রতিদিন গ্রামের সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

এই চক্রের হাত থেকে কৃষি চাষাবাদের ফসলী জমিগুলো রক্ষা পাচ্ছে না। টাকার লোভে সরকারি জমিসহ এলাকার শত শত কৃষি জমি নষ্ট করতে মোটেও দ্বিধা করছে না এই কতিপয় মাটি খেকো চক্র। এস্কেভেটর মিশিন দিয়ে দিন রাত বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছে কৃষি জমি নষ্টের মহোৎসব।

সর্বশেষে সচেতন মহল এই মাটি খেকো চক্রের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন