সহিংসতার শঙ্কা ও নানামুখী অভিযোগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আজ রোববার (২৮ নভেম্বর) সিলেট বিভাগের ৭৭টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে অধিকাংশ ইউনিয়নে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে। ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে সংশয় রয়েছে।রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
সিলেট বিভাগের ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম, লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার ও দাউদপুর ইউনিয়ন। জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর, চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়ন। গোয়াইনঘাট উপজেলার ডুবারি, তোয়াকুল, নন্দিরগাঁও, ফতেপুর, লেংগুড়া ও রুস্তমপুর ইউনিয়ন।সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার রঙ্গারচর, সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর, মুল্লাপাড়া, কাঠইর, মোহনপুর, গৌরাং, লক্ষণশ্রী ও কুরবাননগর ইউনিয়ন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস, শিমুলবাগ, পাথারিয়া, দরগাহপাশা, পূর্বপাগলা নিয়ন, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব বীরগাঁও, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজারপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর, বড়লেখা, তালিমপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর, সুজানগর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন। কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল, ভুগশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডি, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, কুলাউড়া, রাউতগাঁও, টিলাগাঁও, হাজিপুর, শরিফপুর, পৃথিমপাশা, কর্মধা ইউনিয়ন।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বড়ভাকৈর পশ্চিম, বড়ভাকৈর পূর্ব, ইনাতগঞ্জ, দিঘলবাঘ, আউশকান্দি, কুর্শি ইউপি, করগাঁও, নবীগঞ্জ সদর, বাউশা, দেবপাড়া, গজনাইপুর, কালিয়ারভাঙা ও পানিউনদা ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকরা, রিচি, তেঘরিয়া, পৈল, গোপায়া, রাজিউড়া, নিজামপুর ও লস্করপুর।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের বড়লেখার এক ভোটার বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যে ইউনিয়নগুলোতে নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে দেখেছি ভোট সুষ্ঠু হয়নি। কোথাও কোথাও মারামারি হয়েছে। কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। আমরা নির্বিঘ্নে ভোট দিত পারব কিনা তা নিয়ে ভেতরে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। যদি দেখি সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ হচ্ছে তাহলে ভোট দেব, নাহলে ভোট দেব না।
ওই উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি। তবে যদি নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।শাহাব উদ্দিনের মতো শঙ্কায় আছেন এ উপজেলার আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী।বড়লেখার মতো নবীগঞ্জ, কুলাউড়া, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, শান্তিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট,দক্ষিণ সুরমা উপজেলা থেকেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী ও এসব এলাকার ভোটাররাও সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে সিলেটে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও আনসারের ২২ জনের ফোর্স। এদের মধ্যে ৫ জন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার। সকল পুলিশ ২ জন আনসার সদস্যের সঙ্গে রয়েছে অস্ত্র। বাকিদের সঙ্গে লাঠি।ইসি নির্দেশিত ছক অনুযায়ী- ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স।
প্রতি নির্বাচনী উপজেলায় র্যাবের দু’টি করে মোবাইল ও একটি করে স্ট্রাইকিং টিম, প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য মোবাইল টিম ও এক প্লাটুন স্ট্রাইটিং টিম হিসেবে রয়েছে। এছাড়াও সিলেটে এবার প্রথম প্রশিক্ষিত আনসার বাহিনীর স্ট্রাইটিং টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতি উপজেলায় ভোটগ্রহণের আগের দু’দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন অর্থাৎ- মোট ৪ দিনের জন্য নির্বাহী হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় নিয়োগ করা হয়েছে একজন করে বিচারিক হাকিম।
সুষ্ঠভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা নিজেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। র্যাব সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।এর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং অ্যাজেন্টরাও শনিবার বিকেলের মধ্যে নিজেদের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। অন্যান্য সরঞ্জামও কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদ বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। বরং বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। রোববার সকাল ৮টা থেকে যথানিয়মে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আইনশৃঙলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল ও প্রতি তিন ইউনিয়নের জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স টহলরত থাকবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন