নির্বাচন করলে যে সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন দরকার হয় সেটি বিএনপির নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন এ কারণেই ভোটে না এসে নানা সময় নানা কথা বলে তারা।তৃণমূল পর্যন্ত উন্নয়নের কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়- এমন মন্তব্যও করেন দলটির সভাপতি।বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর নিয়ে বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হন তার বাসভবন গণভবন থেকে। আর সাংবাদিকরা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে।স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে সরকার প্রধান ঢাকা ছাড়েন ৩১ নভেম্বর; ফেরেন ১৪ নভেম্বর।বরাবর রাষ্ট্রীয় বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফিরে গণমাধ্যমের সামনে আসেন শেখ হাসিনা।
এই আয়োজনে শুরুতে সফর সম্পর্কে লিখিত একটি বক্তব্য থাকে। পরে গণমাধ্যম কর্মীরা প্রশ্ন রাখেন সাম্প্রতিক ঘটনবলী সম্পর্কে।এই সংবাদ সম্মেলনেও ব্যতিক্রম ছিল না। গণমাধ্যম কর্মীরা তার কাছে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টার পর অগুণতি মানুষকে প্রাণদণ্ড দেয়া ছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে কি না, এসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন রাখেন।
তবে এমনও দেখা গেছে একজন সাংবাদিক একাই প্রশ্ন করেছেন তিনটি বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী একটির জবাব দিয়ে আর আগাননি। ফলে সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হবে কি না এমন একটি প্রশ্নও সঙ্গে থাকা অন্য একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আর দেননি।তবে অন্য এক গণমাধ্যমকর্মীর আরেক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি কিছু কথা বলেন। যদিও সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচন-এমন কথা তিনি বলেননি।২০১৪ সালে বিএনপির দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপির বর্জনের বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “তারা ইলেকশন করবে না। ইলেকশন করবে কীভাবে?ইলেকশন করতে গেলে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার হয়, জনসমর্থন দরকার হয়, সেটা যখন নাই, তখন তারা ‘আমরা করব না, মানি না বলে দৈন্যতাটা প্রকাশ করে।
বিএনপি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের কথা বলেও আসলে সেখানে অংশ নিয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর যেখানে স্বতন্ত্র পরিচয়ে তাদের প্রার্থী ছিল না,সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারাতে দলটির মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের পেছনে পরাজয়ের আশঙ্কা কাজ করেছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা জানে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত এমনভাবে উন্নয়নটা করেছে, সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, আওয়ামী লীগকেই চায়।
ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে না বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেটি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা ইলেকশন করে না। ইলেকশন নিয়ে এরা প্রশ্ন তোলে কীভাবে? জিয়াউর রহমান কী ইলেকশন করেছিল ৭৭ সালে? হ্যাঁ/না ভোট। ৭৮ সালে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেগুলো কী কোনো নির্বাচন ছিল?৮১ সালের নির্বাচনে কতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, কত মানুষের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল- এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেছেন? সবাই এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে কী করে চলে?’
তারেক চায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হোক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন,গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে,দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে, গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে বা ১০ ট্রাক চোরকারবারি অস্ত্র মামলায় আসামি হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ফিউজিটিভ হয়ে বিদেশে রয়েছে,তাদের তো প্রচেষ্টা থাকবেই বাংলাদেশ সবসময় ব্যর্থ হোক। বাংলাদেশে সবসময় একপটা গোলমাল লেগেই থাকুক। চেষ্টা তো এর মধ্যে তারা প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছে।
বিএনপি নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন এখন কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাবে? গ্রেনেড হামলা করে পারল না। সেই ৭৪ কেজি বোমা ফিট করার পরও বেঁচে গেলাম। সরাসরি গুলি করল কত দফা করল বারবার তো আমি ভুক্তভোগী। তাতেও পারল না। আমি যাচ্ছি সামনে থেকে আমার গাড়ি আটকে আক্রমণ, সেখানেও মারতে পারল না।এতবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারল না তাদের তো সেই চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবেই। সেটাই তারা করে যাচ্ছে। সেটাই তারা করবে। এটাই তাদের চরিত্র।’তারেক রহমান লন্ডনে বসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন- এমন অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর আমাদের তো কিছু লোক থাকেই পয়সা দিয়ে ভাড়া খেটে যত পারে বাংলাদেশে বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতেই থাকে কারণ এখানে মানি ম্যাটার্স।
‘যেভাবেই বাংলাদেশ থেকে অনেক অর্থ চুরি করে নিয়ে আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। সামান্য কিছু টাকা আমরা উদ্ধার করেছি। সেটা খালেদা জিয়ার এক ছেলের টাকা। বাকিও তো আছে। তারা সেখানে সেগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করছে।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে কীভাবে গোলমালটা পাকাবে, আজকে এখানে বোমা হামলা, কালকে ওখানে মন্দির ভাঙা কালকে সেখানে মূর্তির ওপর কোরআন শরীফ রাখা সবকিছু কারা নিয়ন্ত্রণ করে কোত্থেকে আসে? এটা তো তদন্তে বের হচ্ছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ায় সুবিধা আছে সিসি ক্যামেরায় বের করা হয়েছে। আরও তথ্য বের হবে।’গণমাধ্যম কর্মীদেরকে আরও তৎপর হওয়ার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি প্রশ্ন করেন ষড়যন্ত্র কোথায়, তাহলে যাব কোথায়? আপনাদের তো বের করা উচিত।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন