ইউপি নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ৯ উপজেলার ৭৭ ইউনিয়নে প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। এই নয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নির্বাচন করছেন ৮০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে এরাই শেষ পর্যন্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বিএনপি’র (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরাও জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে সিলেট জেলার ১৬টি, সুনামগঞ্জ জেলার ১৭টি, হবিগঞ্জ জেলার ২১টি এবং মৌলভীবাজার ২৩টিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও সিলেটের জৈন্তাপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী কম থাকলেও অন্য উপজেলাগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি।
সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৬ জন, জৈন্তাপুরে ২ জন, দক্ষিণ সুরমায় ৫ জন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪ জন এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১২ জন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮ জন, নবীগঞ্জে ১৬ জন, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ১৪ জন, কুলাউড়ায় ৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নগরঘেঁষা সিলাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহ ওলিদুর রহমানের মুখোমুখি হয়েছেন বিদ্রোহী মুজিবুর রহমান। জালালপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওয়েছ আহমদের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী নেছারুল হক চৌধুরী মোস্তান। লালাবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তোয়াজিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে আব্দুল মুহিত। মোগলাবাজার ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়েছেন সদরুল ইসলাম। তার সঙ্গে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ফখরুল ইসলাম শায়েস্তা। দাউদপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল হককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন নুরুল ইসলাম আলম।
গোয়াইনঘাটের রুস্তুমপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাসুক আহমদ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্দুল মতিন। ফতেহপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন বিদ্রোহী আমিনুর রহমান চৌধুরী। লেঙ্গুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া রাসেল। নন্দিরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল হাসান আমিরুল। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। ডৌবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুভাস দাশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম নিজাম উদ্দিন। তোয়াকুল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী লোকমান আহমদের বিদ্রোহী হয়েছেন শামসুদ্দিন আহমদ।
সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক রাজা। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আব্দুল কাইয়ূম। চা বাগান অধ্যুষিত চিকনাগুল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রশিদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মনির উদ্দিন। দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আব্দুছ সালাম। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছুদ আলী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন দলীয় নেতা আব্দুল কাদির। কোরবাননগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামস উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেতা আফজাল নূর ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী কোহিনূর আলম। মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সীতেশ রঞ্জন দাস তালুকদার। দলীয় নেতা মঈন উল হক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন। কাঠইর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বুরহান উদ্দিন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেতা আজিজুর রহমান তালুকদার ও আব্দুল মতিন। সুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুস ছাত্তার। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেতা আমির হোসেন রেজা ও তাজুল ইসলাম। গৌরারং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছালমা আক্তার চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেত্রী চম্পা বেগম এবং সারুয়ার আহমেদ।
শান্তিগঞ্জের শিমুলবাক ইউনিয়নে দলের প্রার্থী মিজানুর রহমান জিতুকে চ্যালেঞ্জ করে ভোটে আছেন আব্দুল্লাহ মিয়া ও শাহীনুর রহমান। জয়কলস ইউনিয়নে দলের মনোনীত মাসুদ মিয়ার সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে লড়ছেন দলীয় নেতা আব্দুল বাছিত সুজন, হাছান মামুদ তারেক, রাজা মিয়া ও আব্দুল লতিফ কালা শাহ। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জগলুল হায়দারের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হক। পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে দলের মনোনীত প্রার্থী রাশিকুল ইসলামের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন দলীয় নেতা কামাল হোসেন ও জয়নাল আবেদীন। দরগাপাশা ইউনিয়নে দলের মনোনীত প্রার্থী মনির উদ্দিনের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন দলীয় নেতা মাছুদুল হাসান। পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে ভোটে লড়ছেন দলীয় নেতা মসফিকুর রহমান ও রুবেল মিয়া। পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী দেবাংশু শেখর দাশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, দলের নেতা সফিকুল ইসলাম ও শামছুল আলম ভূঁইয়া। পাথারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামছুল ইসলাম রাজাকে লড়তে হচ্ছে দলীয় নেতা শহীদুল ইসলাম ও হারুনুর রশীদ তালুকদারের সঙ্গে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত জোবায়ের হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম আহমদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং তাঁতী লীগ নেতা আব্দুল মুহিত। দাসেরবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার চক্রবর্তী। উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত রফিক উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আতাউর রহমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. মুমিনুর রহমান টনি। দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নাহিদ আহমদ বাবলুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন। বড়লেখা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত সালেহ আহমদ জুয়েলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজ উদ্দিন। তালিমপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত বিদুৎ কান্তি দাসের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা এখলাছুর রহমান। দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত এনাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সদস্য আব্দুল জলিল ফুলু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাহিদ আহমদ ও ইউনিয়ন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন। এরমধ্যে ইউনিয়ন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন গত কয়েক বছর আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত সুলতানা কোহিনুর সারোয়ারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজির উদ্দিন।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটটুডেকে বলেন, বিদ্রোহীদের বসানোর জন্য এখনো আমরা আলাপ করছি। তারা না সরলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আমরা কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, দলে থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে যারা ভোটে লড়ছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন