• ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার মোটরসাইকেল

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২১
খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার মোটরসাইকেল

নিউজ ডেস্ক:বিভিন্ন সময়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, চুরি হওয়ায় উদ্ধারকৃত, মাদক বহনের কারণে কিংবা দুর্ঘটনার দায়ে আটক বা জব্দ মোটরসাইকেল ও মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত মোটরসাইকেল সহ নামি-দামি ব্র্যান্ডের কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন গাড়ি এখন খোলা আকাশের নিচে।কোনোটির হেডলাইট, আবার কোনটির ব্রেক-শো, কোনোটির বা ব্যাকলাইট দেখা যাচ্ছে-এর সবই বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত মামলার আলামত। লতাপাতা আর আবর্জনার স্তুপে বিভিন্ন যানবাহনের রোদ-বৃষ্টি আর ধুলার আস্তরণে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর অচল।মূলত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন থানায় বা আদালতে চত্ত্বরে উদ্ধার করা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের যানবাহন খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ লাইন্স, থানায় ও আদালত পাড়ায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় চার হাজারের বেশি যানবাহন। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত। এদের মধ্যে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। এসব যানবাহন সংরক্ষণে যথাযথ কোনো উদ্যোগ নেই।অন্যদিকে আইনি জটিলতার কারণে নিলাম না হওয়ায় কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় বছরের পর বছর আদালত পাড়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় আটক করে আনা এসব মোটর সাইকেল।

যে ঘটনায় বা যে কোনো কারণেই মোটরসাইকেলগুলো আটক করা হোক না কেন, এসব মোটরসাইকেল তো দেশের টাকায় কেনা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার উপযোগী থাকা অবস্থায় মালিকবিহীন এসব মোটরসাইকেল আদালতের অনুমতি নিয়ে নিলামের মাধ্যমে বিক্রির পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় দেশের কোটি কোটি টাকার গাড়ি বছরের পর বছর রোদ বৃষ্টিতে ধ্বংস হচ্ছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ২টি মালখানায় আটককৃত যানবাহন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ৫টি থানায় রাখা হচ্ছে জব্দকৃত মোটরসাইকেল। বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারেও বেশি। এদের মধ্যে মামলার আলামত, চোরাইকৃত ও কাগজপত্রবিহীন মোট তিন স্তরের যানবাহন রয়েছে।আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই ছাড়িয়ে নিতে পারেন না সে গাড়ি। তাই দিনের পর দিন এভাবে জমে উঠেছে গাড়ির স্তুপ। আদালত পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, জেলা বিআরটিএ অফিসের সামনে ও পুলিশ লাইন্সের ভেতরে সরকারি মালখানায়, ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জব্দকৃত যানবাহন ও মামলার আলামত।

দুই চাকার মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার ও সিএনজিও আছে এখানে। স্থান সঙ্কটের কারণে এসব যানবাহন খোলা স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্তুপে রাখা গাড়িগুলোর মধ্যে নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে।সরকারি মালখালায় বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকায় কিছু গাড়ির কাঠামো বা চেসিস ছাড়া অবশিষ্ট নেই কিছুই। নিরাপত্তার অভাবে যানবাহনগুলোর বিভিন্ন পার্সও চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থান সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মোটসাইকেল হারানো ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ জানান, পুলিশ লাইনে এরকম হাজার হাজার গাড়ি বছরের পর বছর পড়ে থেকে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার চাইলে এই গাড়িগুলো তাদের প্রকৃত মালিকের জিম্মায় দিয়ে দিতে পারতো অথবা সঠিক সময়ে নিলামে বিক্রি করে শত কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে পারতেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসিন কবির মুরাদ জানান, বিচারিক কার্যক্রম সমাপ্ত হতে বিলম্ব হওয়ায় গাড়িগুলো নিলামে তোলা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মালিকদের কাছেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাড়ির মালিক ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জেলা বিআরটিএ সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) পার্কন চৌধুরী জানান, আইনি কিছু জটিলতার কারণে মূলত জব্দকৃত মোটরসাইকেলসহ সব আটককৃত যানবহন নিলামে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া যে সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেই, অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনের যোগ্য না হলে নিলামে বিক্রি করা হয় না। আবার জব্দকৃত যানবাহন গুলো আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যানবাহনগুলো রেজিস্ট্রেশনের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে আর নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

এসপি ড. এ এইচ কামরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন অপরাধে এসব যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। কাগজ-পত্র না থাকায় সঠিক মালিকের কাছেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন বলে তিনিও মনে করেন। কিন্তু স্থান সংকুলানের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যথা সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে এবং যানবাহনের মালিকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব বলে মনে করছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন