• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যাকসিন সনদ নিয়ে সিসিকের ভয়ংকর জালিয়াতি,নগরজুড়ে তোলপাড়

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২১
ভ্যাকসিন সনদ নিয়ে সিসিকের ভয়ংকর জালিয়াতি,নগরজুড়ে তোলপাড়

বিশেষ প্রতিবেদকঃ সিলেটে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের সনদ (সার্টিফিকেট) নিয়ে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির ঘটনায় তোলপাড় চলছে নগরজুড়ে।

অপরদিকে কর্মীকে বাঁচাতে মামলা করেনি সিসিক কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) এ বিষয়ে সিসিক কর্তপক্ষ ও পুলিশের বক্তব্যেও গড়মিল পাওয়া গেছে।

সিসিক ‘দায়সারা ভূমিকা পালন করছে’ এমনটি উল্লেখ করে পুলিশ বলছে, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এদিকে শরীরে টিকা না দিয়েই সনদ বিক্রির ঘটনায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কর্মী রাহাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হলেও মাত্র দু’দিন পরে সে জামিনে বেরিয়ে আসে।

সিসিক সূত্র জানিয়েছে- ঘটনার তদন্তে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু জানে না এসএমপি।

জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই টাকা দিয়ে লোকজনের শরীরে টিকা পুশ না করে সনদ প্রাপ্তির অভিযোগ আসছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এক্ষেত্রে জালিয়াতরা প্রবাসীদের টার্গেট করে বেশি। একেকটি সনদের জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এ সব অভিযোগের পর সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জালিয়াতি কান্ডে জড়িতদের শনাক্তকরণে নজরদারি শুরু করেন এবং অবশেষে সিসিক কর্মী রাহাত হোসেনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পান।

রাহাতের সঙ্গে সিসিকের বাইরের এবং ভেতরের আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার বিষয়েও তথ্য আসে সিসিক কর্মকর্তাদের কাছে। পরে গত ২ অক্টোবর রাহাতকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় সিসিক কর্তৃপক্ষ।

তবে রাহাতকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তার বিরুদ্ধে সিসিকের পক্ষ থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। রাহাতকে শুধু সাময়িক বরখাস্ত করেই দায় সেরেছে সিসিক।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘টিকা না দিয়ে সনদ বিক্রির সঙ্গে রাহাতের সংশ্লিষ্টতার কিছু ভয়েস রেকর্ড আমাদের কাছেও থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

তাই তার বিরুদ্ধে আমরা কোনো মামলা দেইনি। বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে এবং রাহাতের সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতেই আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’ এ ঘটনায় এখন গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানান ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম।

কিন্তু এ বিষয়ে কিছু জানে না পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গত ২ অক্টোবর সিসিকে পক্ষ থেকে হঠাৎ পুলিশের কাছে ফোন করে বলা হয়, করোনা টিকার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এক সিসিক কর্মীর বিরুদ্ধে।

তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চান তারা। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু এরপর দু’দিন পর্যন্ত সিসিক কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি ওই কর্মীর বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে ওই কর্মীকে এসএমপি অ্যাক্টে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে।’

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ওই কর্মীর বিরুদ্ধে সিসিকের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিলো। তখন আমাদের তদন্তকাজ এগিয়ে নিতে সুবিধা হতো। ঘটনার তদন্তভার এখন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে কি-না এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানালেন এডিসি বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের।

এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, রাহাতের বিরুদ্ধে তো কোনো মামলাই হয়নি, তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে যাবে কী করে? অথবা সিসিকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আবেদনও করা হয়নি।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত সিসিক কর্মী রাহাত হোসেন নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। চলতি বছরের শুরুতে মাস্টার রোলে নিয়োগের মাধ্যমে সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করেন তিনি। এরই মধ্যে টাকার লোভে জড়িয়ে পড়েন জালিয়াতি কর্মকান্ডে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন