সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্যকে ঘিরে তোলপাড় চলছে সিলেটে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে নিজের মনের কথা তিনি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সামনে বলেছেন। আর এ বক্তব্যেই সরব ভার্চ্যুয়াল মাধ্যম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাকে ঘিরে নানা সমালোচনা করছেন।
আবার বিএনপিসহ বিরোধী বলয়ের কাছ থেকে তিনি বাহবা কুড়াচ্ছেন। সিলেটে পরপর দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের উন্নয়নের প্রশ্নে তার কোনো আপস নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে টিমওয়ার্ক গড়ে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলেন।
পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তিনি একইভাবে টিমওয়ার্ক গড়ে সিলেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সিলেট নগরকে বদলে দেয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মিশনে নেমেছেন তিনি।
এ কারণে বিরোধী বলয়ের নেতা হয়েও তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে পিছপা হননি। গত ৬ই সেপ্টেম্বর ছিল প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এক সময় সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
আমৃত্যু তাদের সম্পর্ক অটুট ছিল। এ কারণে সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী এলেই সিলেট থেকে মৌলভীবাজার ছুটে যান আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে কবর জিয়ারতসহ পারিবারিক কর্মসূচিতে যোগদান করেন। এবার সেখানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। এতে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থানীয় নেতারা।
এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট উন্নয়নে প্রথমে সাইফুর রহমানের অবদান তুলে ধরেন।
বক্তৃতায় প্রসঙ্গ টেনে ধরে তিনি বলেন- এই অঞ্চলে সাইফুর রহমানের যে স্মৃতিগুলো থেকে সাইফুর রহমানের নাম মুছে ফেলে দেয়া হয়েছে;তেমনি আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নামও মুছে ফেলা হয়েছে।
আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলছে। কিন্তু মুছে ফেললেও মানুষের মুখ থেকে নতুন নাম কিন্তু উচ্চারণ করাতে পারছে না।
মানুষ এখনো জানে সেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আজকে যেটা গর্ব করে বলেন- বিভাগীয় স্টেডিয়াম, যা-ই বলেন না কেন এই অঞ্চলে বলতে গেলে অনেক বলতে হবে। আমি শুধু বলবো, এদের সম্পর্কে কিছু বলে লাভ নেই।
এদেরকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া কোনো বক্তব্য আমার মুখেও আসতেছে না। এদের চামড়া এতো শক্ত হয়েছে; যে গণ্ডারের চামড়া থেকে আরও বেশি। এদের গায়েও কিছু লাগে না।
আরিফ বলেন;আর ঘুম থেকে উঠে তারা বিএনপি’র পরিবারের ওপর শহীদ জিয়া থেকে শুরু করে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান পর্যন্ত শেষ হয়। তসবির মতো জপতে থাকে।
তাদের আর কোনো কাজ নেই। তারা সরকারে বসে ঘুম থেকে উঠে কি বলবো, ভাষায় বলার মতো নেই। এখন তারা শেষ পর্যন্ত সব ধ্বংস করে দিয়ে এখন লাগছে পদকটা নিয়ে টানাটানি। এদের যে কী দশা হবে আল্লাহ জানে। আসলে তারা ভীত।
আগামী আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- আমি একটি কথা বলে রাখি- আমাদের নেতৃবৃন্দরা আমাদের মনে বল থাকতে হবে।
জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বলবো-আর বেশি সময় দেয়া এদেরকে উচিত নয়। এরা আসলে শিয়ালের মতো পালাবার চেষ্টা করতেছে। বিশ্বাস করেন- মামলা মোকাদ্দমা নিয়েও আমাদের মনের মধ্যে শান্তি আছি, দেশের মধ্যে আছি।
তারা প্রত্যেকের বউ বাচ্চা কীভাবে পাঠিয়ে দেবে, মোটামুটি ৭০ ভাগ পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যারা রয়েছে তারা অস্থিরতার মধ্যে আছে। কাজেই একটি শক্ত আন্দোলন দরকার। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার আমাদের জেলা ওয়ারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমার এলাকা তুমি নিয়ন্ত্রণ করবে।
এভাবে আন্দোলন করতে হবে। আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং তখনই মরহুম এম সাইফুর রহমানের আত্মায় শান্তি পাবে।
এদিকে- আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর এটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা আলোচনা করছেন।
আরিফকে একহাত দিলেন আসাদ উদ্দিন
এদিকে,সিলেট সিটি করপোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ধুয়ে দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ আসাদ।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে তিনি আরিফের সম্প্রতি দেয়া এক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কঠোর ভাষায় তাকে আক্রমন করেছেন এবং দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া ও তার সঠিক ব্যবহার না করার বিষয়টিও পরিস্কার তুলে ধরেছেন তিনি।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, সরকার ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর করা কটুক্তিমূলক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে এসব অসৌজন্যমূলক, অশালীন বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহবান জানাচ্ছি।
আসাদ বলেন, মেয়র সাহেব,আপনি ভুলে যাবেন না আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন এবং ইচ্ছামতো সরকারের টাকার অপচয় করছেন।
অতীতে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দু-হাত ভরে সিটি কর্পোরেশনকে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি সেই টাকায় পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছেন।
এত গাফিলতি এবং অনিয়মের পরেও সরকার উন্নয়নের স্বার্থে দেশের একসময়ের শীর্ষ তালিকাভূক্ত দুর্নীতিবাজ হওয়া সত্ত্বেও আপনার বরাদ্দ বন্ধ করেনি,কিংবা সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনি। কারণ আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না বরং সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী.
আসাদ দুঃখ প্রকাশ করে লেখেনে, এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও আপনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গন্ডারের চামড়ার সাথে তুলনা করলেন। আর কি পেলে আপনার মধ্যে সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ জন্ম নেবে? বক্তব্যে আপনি শক্ত আন্দোলনে যাওয়ার কথা বললেন। সেটি আবার মিছিল-মিটিং ছাড়া অন্যভাবে।
তবে কি আপনি আবারও ২০১৪ সালের মতো পেট্রোল বোমার দ্বারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ইঙ্গিত দিলেন? ভবিষ্যতে যদি আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে এধরণের কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটে তবে উস্কানিদাতা হিসেবে এর দায়-দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
আরিফের আমলে নগরভবনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আসাদ লিখেছেন, আপনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আপনি নগর ভবনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন।
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনকে রূপ দিয়েছেন মানুষের আতঙ্কের প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছেন কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। যানবাহন ক্রয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ে করা হয়েছে পাহাড়সম দুর্নীতি।
এক কাজ একাধিকবার করে তুলেছেন শত কোটি টাকা বিল। জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন পর্যন্ত শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও মাত্র ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় অর্ধেক নগরী।
নগরবাসীর আবেগের যায়গা হযরত মাণিক পীর গোরস্থানে মানুষের স্বজনের কবরে চালিয়েছেন বুলডোজার,জুতা পায়ে সদলবলে হাঁটছেন কবরের উপর দিয়ে। নগরবাসীকে পানীয় জলের ব্যবস্থা আর মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে চরম ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
আর,সিলেটের রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কথাতো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু তা আপনার কানে পৌঁছায় না।
গত কয়েকদিন আগেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ থেকে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন ইউনিয়নের জায়গায়।
আসাদ তার লেখা শেষ করেছেন এবভাবে, জনশ্রুতি আছে, শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে নিজের মালিকানাধীন ভূমির কদর বাড়াতেই এ কাজ করা হয়েছে।
আপনার এসব আচরণ দেখে সিলেটি ভাষার একটা প্রবাদ খুব মনে হচ্ছে- কার হগদায় খাওগো বান্দি, ঠাকুর চিনোনা।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন