বিশেষ প্রতিবেদক:: সিলেটের জাফলং ডাউকি নদীর প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার পিয়াইন নদীতে যন্ত্রদানব বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এমন সংবাদে পরিবেশ অধিদপ্তর চালায় অভিযান।
ঘটনাস্থল নদীতে প্রায় অর্ধ শতাধিক নৌকা ছিল। ছিল বালুখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরাও। তখন সিন্ডিকেট চক্র অনেকটা প্রকাশ্যেই এসব বালু নৌকায় ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করছিল। ঠিক সেই সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে বদলে যায় চিত্র।
বালুখেকোরা তাদের দেখে নৌকা ফেলে পালিয়ে যায় যারযার মতো। অনেক নৌকাকে বালুসহ আটক করে অভিযান পরিচালনাকারী দল পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের নিয়ে আসা হয় নয়াবস্তি এলাকার তীরে। সেখানে আসার পর পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নৌকায় মিললো ড্রেজার ও সিক্স সিলিন্ডার বোমা মেশিন!
সিলেটের জাফলংয়ের নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি এলাকা। এটি আদালত ঘোষিত পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ জোন। ওই এলাকায় বালু কিংবা পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু জাফলংয়ের ইসিএ জোনের পিয়াইন নদীতে গত দুই মাস ধরে অবাধে পাথর উত্তোলন করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নামে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেটের দাপটের কাছে অনেকটা অসহায় প্রশাসনও।
স্থানীয় কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, প্রতিদিন কান্দুবস্তি এলাকা থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুখেকো সিন্ডিকেট সদস্য গোয়াইনঘাট যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুভষ দাস, এমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন,মুজিবুর ও ফয়জুল মিয়াসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ টাকার বালু লুটপাট হচ্ছে।
প্রায় ২২ দিন আগে খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছিলেন।
কিন্তু অভিযানের পরদিনই আবার বদলে যায় এখানকার দৃশ্যপট।
আগের মতোই ৪-৫শ নৌকা নিয়ে সিন্ডিকেটরা বালু লুটপাট করছিল। এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে তাদের হুমকি দেয় বেপরোয়া চাঁদাবাজরা।
সূত্র জানায়, সুমন, সুভাষ, ফয়জুল এবার জাফলংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের দোহাই দিয়ে তারা বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। যন্ত্রদানব বোমা মেশিন জাফলংয়ের আতঙ্ক।
কারণ, ওই বোমা মেশিন তছনছ করে দিয়েছে গোটা জাফলংকে। বোমা মেশিনের তাণ্ডবের কারণেই জাফলংকে ইসিএ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, জাফলংয়ে উত্তোলিত বালুর প্রতি ফুট থেকে দুই টাকা হারে আদায় করে সিন্ডিকেট সদস্যরা। এছাড়া ইউনিয়ন অফিসের নামেও টাকা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বাংলাবাজার এলাকায় ইজারার নামে আরো দেড় টাকা করে রয়েলিটি আদায় করা হয়। যে ইজারার কাগজ দিয়ে টাকা গ্রহণ করা হয় সেই কাগজ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার সারি-২ বৈধ বালু মহালের।
এদিকে,গত রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জাফলংয়ে অভিযানে ছিলেন। এ সময় ৬টি নৌকা ও ৬টি ড্রেজার আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইমরান হোসেন।
তিনি জানান, ‘বালু সিন্ডিকেটের কাউকে অভিযানের সময় নদীতে পাওয়া যায়নি। তবে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন আটক করা হয়েছে।
বিকালে নৌকা ও ড্রেজারের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমরান হোসেন জানান,আমরা তো নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।
নৌকা আটক করে জেল,জরিমানা করা হচ্ছে। যারা বালু নিয়ে সিন্ডিকেট করছে তাদের নদীতে না পেলে মামলা কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তাদের সহযোগী যাদের পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন