• ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

একূল ওকূল দুই কূল হারালেন শফি চৌধুরী!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১

সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী দল ছেড়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া হারালেন একূল-ওকূল দুইকুল। দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি হওয়া তো দূরের কথা- জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে সাবেক এই এমপির।

১৪৯টি কেন্দ্রের একটিতেও বিজয়ী হতে পারেননি বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্রী প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী।

এমনকি তাঁর নিজের কেন্দ্রেও পরাজিত হয়েছেন তিনি।

শফি চৌধুরীর এমন ভরাডুবিতে বিএনপির নেতারা বলছেন দল ছাড়া নির্বাচন করলে এমনই হয়।
নেতাকর্মীর কেউই দলের নির্দেশনা মেনে তাঁর পক্ষে কাজ করেনি।

সূত্র জানায়,নির্বাচন কমিশন সিলেট-৩ আসননের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে গত ২ জুন। এর আগে এই আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস ১১ মার্চ মারা যাওয়ার পর ১৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন (ইসি) আসনটি শূন্য ঘোষণা করে।

তফসিল ঘোষণার সময় ওই আসনের সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন।

তিনি আমেরিকায় অবস্থানকালে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। তড়িগড়ি করে দেশে এসে সবাইকে চমকে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপির এ সদস্যকে বহিষ্কার করে দলের হাইকমান্ড। যদিও আসনটি শূন্য ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না- এমন ঘোষণা দেন। কিন্তু শফি আহমেদ চৌধুরী দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।

শিল্পপতি শফি আহমেদ চৌধুরী ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এরপর ১৯৯৬ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে কারো অংশগ্রহণ ছাড়াই তিনি বজয়ী হন।

যদিও এই নির্বাচনের মাত্র কিছুদিন পর আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

তবে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে হারিয়ে এমপির খাতায় নাম লেখান তিনি।

এরপর ২০০৮ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি (শফি চৌধুরী) প্রার্থী হননি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ভোট পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ২শ ৮৮টি। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ ৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শনিবারের (৪ সেপ্টেম্বর) উপনির্বাচনে মোটরগাড়ি (কার) প্রতীকে তিনি ভোট পান ৫ হাজার ১৩৫টি।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ৯০ হাজার ৬৪টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) আতিকুর রহমান আতিক পেয়েছেন ২৪ হাজার ৭৫২ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ।

৮৬ বছর বয়স্ক সাবেক এই এমপি (শফি চৌধুরী) যখন আমেরিকা থেকে তড়িগড়ি করে দেশে এসে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।

কারণ দল (বিএনপি) ছাড়া নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন- সেটি নিয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল তৈরি করে। তিনি কী কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন? এমন প্রশ্নও ছিল সিলেটজুড়ে।

তবে প্রার্থীতা ঘোষণার পর তিনি সমালোচকদের সকল কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন,জনগণ আমাকে চায়, তাই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। এটিই তার জীবনের শেষ নির্বাচন উল্লেখ করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। কিন্তু জনগণ তার কথায় সাড়া দেয়নি।খবর সিলেটভিউ

বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক এই এমপির এত বড় পরাজয় নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার শনিবার রাতে সিলেটভিউ-কে বলেন, এদেশের নির্বাচনে দল বড় ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে তার (শফি চৌধুরী) চিন্তা করা উচিত ছিলো* বিএনপি ছাড়া

নির্বাচন করে তিনি কতটি ভোট পেতে পারেন। দল কী জিনিস তিনি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। কারণ যেভাবে পরাজিত হতে হয়েছে তাকে- সেটি অত্যন্ত লজ্জ্বাজনক।

সিলেট-৩ আসনের বিএনপির সকল নেতাকর্মী ও জনগণ শফি চৌধুরীকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও মন্তব্য করেন কামরুল হুদা জায়গীরদার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •