• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অভিযোগের অন্ত নেই সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের:বিল বাড়ে পদে পদে

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ১৯, ২০২১
অভিযোগের অন্ত নেই সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের:বিল বাড়ে পদে পদে

স্টাফ রিপোর্ট ::অভিযোগের অন্ত নেই নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

হাসপাতালটির বর্ষপূর্তিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের সাফাই গেয়েছিলেন কর্ণধারেরা।

কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। আবারও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ ও ‘ভৌতিক’বিল রাখার অভিযোগ উঠেছে সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

বুধবার রাতে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন বড়লেখা উপজেলার বড়খলা গ্রামের কাতার প্রবাসী আব্দুল আজিজ।

সিলেট মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘গলাকাটা’ বিলের ফাঁদে পড়ে তিনি অসহায় হয়ে ছুটে আসেন পত্রিকার কার্যালয়ে। পুত্রবধু ও নবজাতক দুই নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে আটকে আছেন তিনি। বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ কলও দিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী আব্দুল আজিজ জানান,গত শুক্রবার তার সন্তানসম্ভবা পুত্রবধু সাফিয়া আক্তার পারুলের প্রসবব্যাথা শুরু হলে প্রথমে বিয়ানীবাজারে এবং পরবর্তীতে মধ্যরাতের দিকে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে আসেন।

সেখানে ভর্তির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজিজকে জানান,তিন দিনের জন্য সিজার ডেলিভারিসহ বিল আসবে ৩৬ হাজার টাকা। তাদের কথা মেনে নেন আব্দুল আজিজ।

শনিবার মধ্যরাতে ২টি জমজ সন্তানের জন্ম দেন পারুল। জন্মের পরপরই দুই নবজাতককে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা আইসিউতে দুই নবজাতককে রাখার পর বিল আসে প্রায় ১৯ হাজার টাকা। সেই টাকা পরিশোধ করেন আব্দুল আজিজ।

ওই দিনই নবজাতকদের নিয়ে আসা হয় কেবিনে। ৩ দিন পর নির্ধারিত ৩৬ হাজার টাকার বিলের বদলে আব্দুল আজিজকে জানানো হয়,তার বিল এসেছে ৪২ হাজার টাকা। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৩৮ হাজারে আনা হয়।

সেই টাকাও পরিশোধ করেন আজিজ। এরপর তাকে জানানো হয়,এখন থেকে যতদি রোগী কেবিনে থাকবেন, প্রতিদিন কেবিন ভাড়া আসবে ১৫শ টাকা করে।

এরপর সেই হাসপাতালের ৩০৮ নম্বর কেবিনে আরো দুদিন থাকেন পারুল বেগম। মা ও নবজাতকেরা সুস্থই ছিলেন।

বুধবার বিকেলে ডিসচার্জ করার সময় তাদের হাতে আরো ৩২ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ বিভাগ। আকাশ থেকে পড়েন আব্দুল আজিজ ও তার ছেলে।

দুদিনের কেবিন চার্জ ও আনুসাঙ্গিক বিলসহ ৫-৬ হাজার টাকার বেশি আসার কথা নয় বলে জানান আজিজ।

তিনি বলেন,ডাক্তার জাকারিয়া স্যার প্রতিদিন এসে দেখে যেতেন। ৪ দিনে তার কেবিনে এসে রোগী দেখা বাবদ ৮ হাজার টাকা বিল ধরা হয়েছে আমাদের কাছ থেকে। এছাড়া, ডিউটি ডাক্তারেরা একবার এসে দেখে গেলে আরো ৫শ টাকা ধরা হয় বিলের মধ্যে।

সব মিলিয়ে ৩২ হাজার টাকা বিল ধরা হয়েছে। অথচ তাদের কথামতো আমি আগেই সিজার ও কেবিনভাড়া বাবদ ৩৮ হাজার টাকা এবং শিশুদের আইসিইউ বাবদ ১৯ হাজার টাকা দিয়েছি।

প্রথম থেকেই আমার পুত্রবধু ও নাতিরা সুস্থ। এরপরেও দু দিনে ৩২ হাজার টাকা কীভাবে বিল তারা ধরলো তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আমরা বুধবার বিকেলে বাড়ি যাওয়ার জন্য মালপত্র সিএনজি অটোরিকশায় তুলে কেবিন ছেড়ে দেই। কিন্তু তখনই আমার হাতে ৩২ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আমি জিজ্ঞেস করেছি এটা কীসের বিল? আমার রোগী তো সুস্থ। আপনাদের কথা মতো আমি ৩ দিনের বিল এবং আইসিউ বিল দিয়েছি। দু দিনের কেবিন ভাড়া তো ৩২ হাজার টাকা নয়। এত টাকা যখন লাগবে, সেটা তো আমাদের একবারও আপনারা জানাননি।

আমাদের অনুমতি নেননি কোনো কিছু করার আগে। তখন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আমাদের বলেন, সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে রোগী নিয়ে যেতে। অথচ আমার কাছে এখন একটি টাকাও অবশিষ্ট নেই।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল আজিজ বলেন, সারাজীবন দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি মজবুত করেছি আমরা। তবুও পদে পদে আমাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের কথা শুনে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আমার স্ত্রী, পুত্রবধু, সাতি ও স্বজনদের রেখে সাহায্যের জন্য বের হই। রাত ৮টার দিকে জানতে পারি আমাদের বিলের তালিকায় নতুন করে আরো ১৫শ টাকা যোগ হয়েছে। এ সময় বাধ্য হয়ে আমি ৯৯৯ এ কল দিয়েছি। থানায়ও গিয়েছি। পুলিশ আমাদের সাহায্যের আশ^াস দিয়েছেন।’

সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে এটাই নতুন অভিযোগ নয়। এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে আলোচনায় এসেছে এই হাসপাতালটি।

সিলেটে সরকারি কোনো মা ও শিশু হাসপাতাল না থাকায় একমাত্র শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে দাবি করা এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এমনকি মামলাও হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়েছে এসব অভিযোগে।

এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। প্রথম দু বার এক যুবক কল রিসিভ করেন এবং ওই সময়ে ব্যবস্থাপক পারভেজ আহমদ হাসপাতালের দায়িত্বে আছেন এবং বর্তমানে পারভেজ বড় স্যারদের সাথে বৈঠকে আছেন বলে জানান। সুত্র একাত্তরেরকথা

কিছুক্ষণ পর যোগাযোগ করার জন্য প্রতিবেদককে বলেন ওই যুবক। কিন্তু পরবর্তীতে ওই নম্বরে বারবার কল দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ৯৯৯ এ কল দেওয়ার প্রেক্ষিতে বুধবার রাত ১০টায় সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব-৯ ও পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে ৩২ হাজার টাকার ভৌতিক বিল মওকুফ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন