• ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

করোনার টিকার এসএমএসের অপেক্ষায় নগরের ৭৫ হাজার বাসিন্দা

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ১০, ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকার জন্য নিবন্ধনের পরও এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সিলেট নগরের অনেকে। নিবন্ধন করার পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এসএমএস পাচ্ছেন না অনেকেই। এতে নগরের অর্ধ লক্ষাধিক অধিবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

গত বছরের জুলাই মাসে করোনা আক্রান্ত হন সিলেটের নারী উদ্যোক্তা আমিনা খাতুন (৩৪) পরিবারের সকল সদস্য। গত মাসে তিনি টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু নিবন্ধনের এক মাস হয়ে এলেও কোনো এসএমএস না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এই নারী।

তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন,টিকার জন্য নিবন্ধন করলাম প্রায় একমাস হয়ে এলেও এখনো এসএমএস পেলাম না। বিষয়টি খুবই হতাশার। টিকার সরবরাহই যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে খামোখা বয়স কমাচ্ছে কেন? এর চেয়ে বয়স্ক ও অধিকতর ঝুঁকিতে যারা আছেন, তাদের দ্রুত টিকা নিশ্চিত করাটা জরুরি।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের সাথে গণটিকাদান শুরু হয় সিলেট মহানগরেও। টিকা সংকটের কারণে কিছুদিন টিকাদানে ধীরগতি থাকলেও গত ৩০ জুন নিবন্ধন কার্যক্রম দ্বিতীয় দফায় উন্মুক্ত করে সরকার। পরবর্তীরে দুই ধাপে কমানো হয় টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা। এদিকে মহামারি করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় সুরক্ষা টিকা পেতে নিবন্ধনকারীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এসএমএস বিড়ম্বনায় বাড়ছে ভোগান্তি। দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষমাণ টিকা গ্রহীতার তালিকা।

জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় ৭৫ হাজারেরও লোক টিকার জন্য নিবন্ধন করে এসএমের অপেক্ষায় আছেন।

তাদের একজন মো.ইফতেখারুল আলম শান্ত। বাড়ি নগরের ১২ নং ওয়ার্ডের শেখঘাট এলাকার কুয়ারপাড়ে। পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। তার প্রতিষ্ঠান থেকে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও প্রথমে চাকরির শ্রেণী (ধরণ) ও পরে বয়সের বাধ্য-বাধকতার কারণে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারেনি তিনি। তবে এখন বয়সের বাধ্য-বাধকতার ব্যাপারটি উঠে গেলে টিকা নিবন্ধনের যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। টিকা নিতে করেন রেজিস্ট্রেশন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের ২০ দিন পার হলেও এখনো তিনি কোনো এসএমএস পাননি।

তিনি সিলেটটুডেকে জানান,গত ১৯ জুলাই টিকা নেয়ার জন্য তিনি রেজিস্ট্রেশন করেন। নিবন্ধনের তিন সপ্তাহ পার হলেও টিকার তারিখ জানিয়ে তার কাছে কোনো এসএমএস আসেনি। এতদিনেও টিকা না নিতে পেরে হতাশ তিনি।

এদিকে এসএমএস জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে তিনি প্রতিদিনই ঘুরছেন টিকা কেন্দ্রের এ ডেস্ক থেকে সে ডেস্কে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সদ্য শেষ হওয়া তিনদিনের গণটিকাদান ক্যাম্পেইনেও তিনি টিকা গ্রহণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।

মো. ইফতেখারুল আলম শান্ত আরও জানান, তার মতো এমন অভিজ্ঞতা সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার অনেকেরই। তার দুই বন্ধু উচ্চশিক্ষার্থে পোল্যান্ডে যাবার জন্য কয়েকমাস আগে অনলাইনে আবেদন করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে মেইলের মাধ্যমে তাদের বলা হয়েছে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত পোল্যান্ড হাই কমিশনারের অফিসে যোগাযোগ করতে। কিন্তু সেখানে যেতে করোনা প্রতিরোধী টিকা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তাদের। তারা গেলো ঈদুল আযহার আগের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকার জন্য নিবন্ধন করেন। নিবন্ধনের তিন সপ্তাহ পার হলেও টিকার তারিখ জানিয়ে তাদের কাছে কোনো এসএমএস আসেনি। তাই তারা টিকাও গ্রহণ করতে পারছেন না।

শান্তর দুই বন্ধুদের একজন বিক্রম সিং। নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, টিকা গ্রহনের জন্য বিক্রম গত ১৯ জুলাই নিবন্ধন করেন সরকারের নিবন্ধন ওয়েবসাইটে গিয়ে। তবে ২১দিন পেরিয়ে গেলেও টিকার গ্রহণের তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়নি কোনো এসএমএস। এতে তিনি ভোগান্তিতে পড়েছেন উল্লেখ করে দ্রুত টিকা নিশ্চিতের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

নিবন্ধনের পর তারিখ পেতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন,নগরীতে বর্তমানে ৭৫ হাজারেরও বেশি নিবন্ধন রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই নতুন করে নিবন্ধন হচ্ছে। এ কারণে টিকা দেয়ার তারিখ জানিয়ে এসএমএস ছাড়তে দেরি হচ্ছে। আমরা যে হারে টিকা দিচ্ছি, তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে নিবন্ধন হচ্ছে। ফলে টিকাপ্রত্যাশীদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের টিকাকেন্দ্র ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৩ হাজার জনের বেশি লোককে টিকার আওতায় আনা সম্ভব নয়। কেননা তখন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব হবে না। এই তিনহাজারের মধ্যে নতুন নিবন্ধিত ৬০০ জনকে রাখা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়। তারপরও যারা এসএমএস না পেয়ে কেন্দ্রে যাচ্ছে তাদেরও আমরা তাদেরও টিকার ব্যবস্থা করছি। একইসাথে প্রথমদিকে যারা রেজিস্ট্রেশন করে টিকা পাননি তাদেরও টিকার টিকার আওতায় আনছি।’

ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিকা নিবন্ধনের বয়স কমিয়ে আনার পর থেকেই ব্যাপক হারে টিকার নিবন্ধন হচ্ছে। তাই নিবন্ধনের তালিকা অনেক লম্বা হয়ে আসছে। আমাদের দৈনিক ৬০০ জনকে এসএমএস দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও নিবন্ধন হচ্ছে অনেক বেশি। এ কারণে দ্রুত এসএমএস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসএমএস আসতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে দেরি হলেও সবাই টিকা পাবেন।’

এদিকে আগামী ১৩ তারিখ থেকে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন চাপ আরও বাড়বে। তাই আমরা চাচ্ছি সিলেট নগরে নতুন করে আরও কিছু কেন্দ্র বাড়াতে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসাথে ওসমানী হাসপাতাল কেন্দ্রে আরও কিছু টিকাবুথ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে সকল নিবন্ধিতদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

তাই নিবন্ধিতদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা সবাই টিকা পাবেন। সকলের এসএমএস আসবে। এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন