গতকাল লাইভে এসে পরীমণির ন্যাকামি ভালো লাগেনি। এভাবে কোনো সমস্যার মোকাবেলা করা যায় না। তিনি বারান্দা থেকে সবই দেখতে পাচ্ছিলেন। ফুটপাতে ভিড় করা সাংবাদিকদেরও দেখতে পাচ্ছিলেন। তবু তিনি লাইভে এসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে না চেনার ভান করাটাকে মনে হয়েছিল পাবলিক সিম্পেথি আদায়ের একটা কৌশল।
অপেক্ষায় ছিলাম তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের। ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই এমন কোনো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত, যার কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি ধরা অভিযানের মতো তার বাসায় এভাবে অভিযান চালিয়েছে।
কিন্তু না, যে অভিযোগ আনা হলো তার বিরুদ্ধে, তা নিতান্তই স্থূল। বাসায় মদ পাওয়া গেছে এবং মিনি-বার পাওয়া গেছে। তাছাড়া পরীমণি নাকি পর্নোগ্রাফির সঙ্গেও যুক্ত, যদিও কী সেই পর্নোগ্রাফি প্রমাণ দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব খালি মদের বোতল কাওরান বাজারে শয়ে শয়ে পাওয়া যাবে। ঢাকা শহরের অভিজাতদের বাড়িগুলো তল্লাশি করলেও এসব খালি বোতল পাওয়া যাবে। ওয়ান ইলেভেনের পর বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের বাসায় এর চেয়ে বেশি বোতল পাওয়া গিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসাতেও পাওয়া গিয়েছিল। এখনো রাজনৈতিক নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বাসায় মিনি-বার পাওয়া যাবে।
বাড়িতে বসে মদ খাওয়া গুরুতর অপরাধ হতে পারে না। মদ খেয়ে মাতলামি করা, কারো উপর চড়াও হওয়া অপরাধ হতে পারে। বাসায় মদ পাওয়ার এসব স্থূল অভিযোগ একটি অপরাধকে হালকা করে তোলে। এসব বন্ধ হওয়ার দরকার। এসব সভ্যতা পরিপন্থি। অভিজাতরা মদ খায়, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অভিজাতরা চিরকাল মদ খেয়ে এসেছে, বাড়িতে মদের আসর বসিয়ে এসেছে, বাইজিও নাচিয়েছে। সেই ধারা নতুন রীতিতে হলেও এখনো বহমান।
পরীমণি একজন অভিনেত্রী। একজন শিল্পী। তিনি কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা যেত। বিনা ওয়ারেন্টে এভাবে গ্রেপ্তার সমর্থন করলাম না। এভাবে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে জনগণের কাছে চলচ্চিত্র জগৎ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক বার্তা গেল। অভিনয় শিল্পীদের সম্পর্কে একটি খারাপ বার্তা গেল। মানুষ তো এমনিতেই চলচ্চিত্র জগত সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। পরীমণির ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই ধারণা আরও পোক্ত হবে।
পরীমণির পক্ষে শিল্প-সংস্কৃতি জগতের কেউ দাঁড়াচ্ছেন না, কথা বলছেন না। তার অপরাধ সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না বলে গতকাল থেকে কেউ হয়ত দাঁড়াননি, কথা বলেননি। এখন তো জানা গেল। আশা করা যায়, এবার আর কেউ চুপ করে থাকবেন না। চুপ করে থাকলে ভবিষ্যতে একই ঘটনা অন্য কারো সঙ্গেও ঘটতে পারে।
আমরা বিচারক নই, এত আইন-কানুন বুঝি না। তবে এটুকু বোঝার মতো কা-জ্ঞান আছে যে, পরীমণি একটি বিশেষ মহলের রোষানলের শিকার। তাকে নিয়ে খেলছে একটি মহল। সেই খেলায় পরীমণি একটা ফুটবল।সুত্র সিলেটটুডে
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন