সিলেটে লকডাউনকে পুঁজি করে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের যাত্রীহয়রানি চরমে পৌঁছেছে।
লকডাউন আর করোনা পরিস্থিতিতে তাদের জন্য যেন প্রতিদিনই ঈদ!
যাত্রীদেরকে জিম্মি করে অটোরিকশা চালকরা আদায় করছেন দিগুণ-তিনগুণ ভাড়া।
চালকদের দাবি অনুযায়ী ভাড়া না দিলে যাত্রীদের হতে হয় লাঞ্ছনার শিকার।
তবে এবার বিষয়টি নজরে নিয়ে অ্যাকশনে নামবে পুলিশ। পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে পুলিশ বলছে,
হয়রানির শিকার হলেই ৯৯৯-এ কল দিয়ে অভিযোগ করার জন্য। অভিযোগ পেলেই দ্রুত অ্যাকশন নেবে পুলিশ।
সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরের ঘটনা।দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় উঠেছেন শাহেদ আহমদ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী।
গন্তব্য সিলেট নগরী। অটোরিকশা থেকে নেমে নায্য ভাড়া ৩০ টাকা দিতেই থেঁতে উঠেন চালক।
তার দাবি ৫০ টাকা। ৫০ টাকা কেন জানতে চাইলে শাহেদকে চালক বলেন, এত কথা বলতে পারবো না। ভাড়া ৫০ টাকাই।
এসময় শাহেদ বলেন,করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ জন নিয়ে আসলে আপনি ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু আপনি তো যাত্রী পাঁচজনই নিয়ে এসেছেন। তাই ভাড়া ৫০ টাকা নয়,৩০ টাকা নেবেন আপনি। ৫০ টাকা নেওয়া অন্যায় হবে।
এ কথা বলতেই শাহেদের দিকে মারমুখো হয়ে পড়েন চালক। পরে মান-ইজ্জতের ভয়ে শাহেদ ওই চালককে ৫০ শ টাকা দিতে বাধ্য হন।
শুধু শাহেদই নন,এভাড়ে প্রতিদিনই সিলেটের প্রতিটি সড়কে অটোরিকশা চালকদের কাছে এভাবে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু তাদের লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই।
সিলেটসহ সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদুল আযহার দুদিন পর থেকে আবারও লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটসহ সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিলেটে দেদারসে চলছে সিএনজি অটোরিকশা।
সেই সঙ্গে চালকরা সকল সড়কে যাত্রী কম না নিয়েই যাত্রীদের জিম্মি করে ৬০% বেশি ভাড়া আদায় করছেন। দাবি অনুযায়ী ভাড়া না দিলে অনেক সময় যাত্রীদের হেনস্তাও করছেন চালকরা।
মান-ইজ্জতের ভয়ে চালকদের অন্যায় দাবি মেনে বাড়তি টাকা দিয়েই তাদের হাত থেকে যাত্রীরা রেহাই পাচ্ছেন।
বিশেষ করে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল থেকে গোয়ালাবাজার পর্যন্ত অটোরিকশা চালকরা বেশি নৈরাজ্য চালাচ্ছেন। এ লাইনের যাত্রীদের অভিযোগ,চন্ডিপুল থেকে গোয়ালাবাজার পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাড়া ৫০-৬০ টাকা।
তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে ৬০% ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হয় ১০০ টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে ৩ জন যাত্রী বহনের নিয়ম। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চালকরা ৫ জন যাত্রী বহন করেও ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করে নেন। আর সন্ধ্যা হলেই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে তারা ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেন যাত্রীদের কাছ থেকে।
সিলেটজুড়ে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের এমন হয়রানি আর নৈরাজ্যের প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন যাত্রীসাধারণ।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন,করোনাকালে সড়কে সকল ধরনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসএমপির ট্রাফিক বিভাগ তদারকি করছে এবং যে সময় যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেরকমই নিচ্ছে।
তবে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বেশি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষকেও প্রতিবাদী হতে হবে।
এরকম ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ দ্রুত অ্যাকশন নিতে পারবে।
দক্ষিণ সুরমার কিনব্রিজের মুখ ও চন্ডিপুল থেকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার পর্যন্ত চালকরা বেশি নৈরাজ্য চালাচ্ছেন- বিষয়টি নজরে আনলে বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন,এসএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট থানাপুলিশকে অবগত করা হবে এবং দ্রুত অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন