মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তিনদিনে ১৮ হাজার মানুষকে করোনার টিকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রদানের এই কর্মসূচির সাথে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এই টিকা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১, ২ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে প্রাথমিকভাবে টিকা প্রদানের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ৬০০ জন মানুষ প্রথম পর্যায়ে এই টিকাকরণের আওতায় আসবেন। টিকাকরণের এই কার্যক্রমকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।৩০টি ওয়ার্ডে একসাথে টিকাকরণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে টিকা বুথ, প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে হচ্ছে একটি করে বুথ। সেই বুথে টিকা প্রদান করবেন ইপিআই ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের নামের তালিকায় এর মধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
কালীঘাট ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক কামাল মিয়া সিলেটটুডেকে জানান, প্রতি ইউনিয়নে ৩টি টিম। প্রতি টিমে ২ জন টিকাদানকারী ৩ জন স্বেচ্ছাসেবী মোট ৫ জন। ৩টি টিমে ১৫ জন কাজ করবে। ৩টি টিমের জন্য ১ জন ১ম সারির তদারককারী/সুপারভাইজার থাকবে।
টিকাদানকারী হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী যারা নিয়মিত অন্যান্য টিকা দিচ্ছেন।
সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভায় স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা হয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদেরকে টিকা নিবন্ধনের ব্যাপারে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।
কালীঘাট ইউনিয়নের ভুড়ভুড়িয়া চা বাগানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন রিপন মৃধা। তিনি জানান, আমরা গত ৩১ আগস্ট টিকা নিবন্ধনের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ১ তারিখ থেকে আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জনের নিবন্ধন করে যাচ্ছি মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে যে ভীতি ছিলো সেটা অনেকাংশে কেটে গেছে,আমি যে ওয়ার্ডে দায়িত্ব পেয়েছি সেই ওয়ার্ডে আশা করি সকলের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবো।এদিকে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের টিকা নিবন্ধনের কাজ চলছে ভিন্নভাবে।
কালাপুর ইউনিয়নে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক তাসলিমা আক্তার জানান, যাদের টিকা নিবন্ধন ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিচ্ছে না তাদের নিবন্ধন আমরা ম্যানুয়ালি করে আনছি। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের নাম আমরা আলাদা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করছি, পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে এদের নিবন্ধন ও টিকাকরণ নিশ্চিত করা হবে।
টিকাকরণ সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। তারা টিকা নেয়ার সুফল সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জানান, এই টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর। করোনা মোকাবেলায় কয়েকটি কার্যকর উপায়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টিকা গ্রহণ। তাই এই টিকা কর্মসূচিতে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম সিলেটটুডেকে বলেন, ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ১৮ হাজার টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে ১টি করে বুথ। ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। ৭ তারিখের আগেই সবার রেজিস্ট্রেশন করার লক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন আশানুরূপ, জনসমাগম এড়াতে আগেই রেজিস্ট্রেশন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টিকা প্রদানের দিনগুলোতে টিকার বুথে শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক, আনসার ও পুলিশ কাজ করবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন