• ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকে ‘আল্লাহর সৈনিক’ বলা আজহারীও টিকা নিলেন

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০২১

করোনাভাইরাসকে ‘আল্লাহর সৈনিক’ আখ্যা ও করোনা থেকে বাঁচতে একটি দোয়া করার পরামর্শ দেয়ার সোয়া এক বছরের মাথায় এই ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিলেন আলোচিত ও বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।

বর্তমানে মালয়েশিয়ার অবস্থানকারী ব্যাপক আলোচিত এই বক্তা দ্বিতীয় টিকা নেয়ার বিষয়টি তার নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে সবাইকে টিকা নিতেও বলেছেন।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে এবং পরে পশ্চিমা দুনিয়ায় করোনার বিস্তার হলে বাংলাদেশের ধর্মীয় বক্তারা ব্যাপকভাবে বলতে থাকেন, এই ভাইরাস পৃথিবীতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন অমুসলিমদেরকে শায়েস্তা করতে।

করোনাকে আল্লাহর সৈনিক আখ্যা দিয়ে দেশে হাস্যরসের জন্ম দেন নানা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা মুফতি কাজী ইব্রাহীম।ওই বছরের মার্চে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের একটি মাহফিলে যোগ দিয়ে একই কথা বলেন আহজারীও।তিনি সে সময় করোনা থেকে বাঁচতে একটি নির্দিষ্ট দোয়া করতে নিজের ফেসবুকে পরামর্শ দেন।

তবে এক বছর পর সেই মালয়েশিয়া যখন করোনায় জর্জরিত, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন সোমবার বাংলাদেশ সময় রাতে টিকা নেয়ার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন আজহারী।

তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজ মালয়েশিয়াতে করোনা ভ্যাকসিন— ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করলাম। আল্লাহ তা’আলা টিকার সব ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের মুক্ত রাখুন। এর পুরোপুরি উপকার আমাদের নসিব করুন।’

তিনি অন্যদেরকেও টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা যারা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, সম্ভব হলে দ্রুত নিয়ে নিন। যতো দ্রুত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শেষ হবে, তত দ্রুত সংক্রমণ কমে আসবে এবং আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

আজহারীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হলেও তিনি তার সমর্থকদেরকে যে টিকা পাওয়া যায়, সেটিই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও, সব ভ্যাকসিন একটা কাজ করতে প্রায় শতভাগ সক্ষম। আর সেটা হচ্ছে—শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা আপনাকে অতি মাত্রায় অসুস্থ হওয়া এবং সংকটাপন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করবে। সুতরাং যে ভ্যাকসিনই আগে পাবেন, আল্লাহর উপর ভরসা করে সেটাই নিয়ে নিন।’

টিকার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি এও লেখেন, ‘ভ্যাকসিনের কাজ হলো শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা। ভ্যাকসিন নেয়া থাকলে, আপনি আক্রান্ত হলেও হয়তো ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে পড়তে হবে না। অথবা আপনি করোনা ভাইরাস বহনকারী হলেও, ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে হয়ত নিজে আক্রান্ত হবেন না, কিন্তু ভ্যাকসিন নেয়নি এমন লোকদের সংস্পর্শে গেলে, আপনার মাধ্যমে তারা আক্রান্ত হতে পারে।

‘তাই, কোনো দেশের বেশিরভাগ মানুষের টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে, শুধুমাত্র তখনই কেবল মাস্কের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা যেতে পারে। তা না হলে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমেও খুব বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। তাই, এই মুহূর্তে প্রতিটি দেশে গণ টিকার বিকল্প নেই।’

গত বছর যা বলেছিলেন আজহারীগত বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় দেয়া আহজারীর একটি বক্তব্য ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।তিনি সেদিন বলেন, ‘এই করোনা হচ্ছে আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহ সব সময় ধরে না। ধরলে আবার ছাড়ে না। জলে-স্থলে ভূমিকম্প, ভূমিধস, মহামারি– এগুলো যা হচ্ছে সব আমাদের হাতের কামাই।

‘মাঝেমধ্যে আল্লাহ ভাইরাস পাঠান। কিছু দিন আগে সার্সভাইরাস পাঠিয়েছিলেন। সার্স যেতে না যেতেই এখন পাঠিয়েছে করোনা। কিছু দিন আগে বাংলাদেশে ছিল ডেঙ্গু। হঠাৎ করে দেখবেন আবার ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন। আল্লাহ এগুলো দিয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, ভালো হওয়ার জন্য। নাফরমানি ছেড়ে দেয়ার জন্য। এক আল্লাহর দাসত্ব ও ইবাদত করার জন্য।’

আজহারী আরও বলেন,এটি হলো মুসলিম জাতির জন্য রিমাইন্ডার। এটি হার্ড রিমাইন্ডার। এই রিমাইন্ডার আল্লাহ পাঠান, যাতে আমাদের টনক নড়ে। যাতে আমাদের ঘুমন্ত বিবেক জেগে ওঠে।করোনা ঠেকাতে তখন দোয়ার পরামর্শও ছিল

এখন টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া আহজারী মার্চের প্রথম সপ্তাহে তার ভ্যারিফাইড পেজে একটি দোয়া শেয়ার করে সেটি বেশি বেশি পড়ার পরামর্শও দেন।দোয়াটি শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে, প্রয়োজনীয় সতর্কতার পাশাপাশি এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করুন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে হেফাজত করুক।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন