সিলেটের অন্যতম বড় আবাসন প্রতিষ্ঠান দি ম্যান এন্ড কোম্পানি লিমিটেড। নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় এই কোম্পানির মালিকানাধীন আবাসন প্রকল্প গার্ডেন টাওয়ারে গ্যাস সংযোগ নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
গার্ডেন টাওয়ারে ৮১টি অবৈধ গ্যাসের চুলার ব্যবহারের প্রমাণ পেয়ে গত ১৪ জুলাই টাওয়ারের বৈধ-অবৈধ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জালালাবাদ গ্যাস। এরপর থেকেই চরম দুর্ভোগে আছেন গার্ডেন টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। তাদের ঈদও কেটেছে গ্যাস ছাড়া।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের বিপনন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী খান মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘ওই টাওয়ারে ১১২টি গ্যাসের চুলার আবেদন করে ১৯৩টি চুলা ব্যবহার করা হচ্ছিল অবৈধভাবে ৮১টি চুলা ব্যবহার করায় আমরা তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।’
নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় জালালাবাদ গ্যাস ভবনের বিপরীত পাশেই গার্ডেন টাওয়ারের অবস্থান। এতে শতাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া টাওয়ারের পাশেই ম্যান এন্ড কোম্পানির মালিকানাধীন গার্ডেন ইন হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৈধ-অবৈধ গ্যাস ব্যবহৃত হতো।২০০৪ সালে নির্মিত গার্ডেন টাওয়ারে শুরু থেকেই অবৈধভাবে অতিরিক্ত ৮১টি গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে জালালাবাদ গ্যাসের একটি সূত্র।
তবে কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করছেন, তাদের সব চুলা বৈধ। শিগগিরই গ্যাস সংযোগ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে।
গার্ডেন টাওয়ারের ফ্ল্যাটের মালিক ও বাসিন্দারা বলছেন, তারা প্রতি মাসেই ম্যান এন্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যাসের বিল পরিশোধ করছেন। সব গ্যাস সংযোগই বৈধ বলে তাদের জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে সব গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ম্যান এন্ড কোম্পানি ও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, খামখেয়ালির ফল ভোগ করতে হচ্ছে তাদের।
গার্ডেন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কামরুজ্জামান কানন বলেন, ‘টাওয়ার নির্মাণের কিছুদিন পর থেকেই আমি এখানে আছি। নিয়মিত গ্যাস বিল দিয়ে আসছি। অথচ এখন আচমকা অবৈধ সংযোগ বলে গ্যাস বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। যদি অবৈধ সংযোগই হয় তাহলে কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে বিল নিলো কেন?
হঠাৎ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমিসহ সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ সিলিন্ডার গ্যাস কিনে এনেছেন। রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে আনছেন অনেকে। এবার ঈদও করতে হয়েছে এমন অবস্থায়। আবার শাটডাউনের কারণে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।’
গার্ডেন টাওয়ার ফ্ল্যাট মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজমল আলী বলেন, ‘ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা প্রতিদিন অভিযোগ দিচ্ছেন। তাদের দুর্ভোগের কথা বলছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা গ্যাস সংযোগ আনিনি। এখন বিচ্ছিন্ন করায় আমাদের কোনো দায় নেই। আমরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসছি।’
তিনি বলেন,‘এই বিষয়টির পুরো ম্যান এন্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দায়। তারা গ্যাস সংযোগ এনেছেন। আমরা বিলও তাদের কাছে পরিশোধ করি। এখন তারা অবৈধভাবে সংযোগ এনেছেন, নাকি অন্য কোনো ঝামেলা হচ্ছে সেটি তারাই বুঝবেন। দ্রুত সংযোগ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরাও তাদের চাপ দিচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে জালালাবাদ গ্যাসের কর্মকর্তা জাকির হোসাইন বলেন, ‘টাওয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈধ সংযোগগুলো চালুর ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে। খবর সিলেট টুডে২৪ নির্ধারিত জরিমানা আদায় করে তাদের বৈধ ১১২টি চুলা আবার চালু করার বিষয়টি জালালবাদ গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে।’
কতদিন ধরে গার্ডেন টাওয়ারে অবৈধ চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে জাকির হোসাইন বলেন, ‘৪/৫ বছর ধরে তো গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ আছে। তার আগে তারা এই কাজ করতে পারেন। তবে কবে চুলা লাগিয়েছেন তা বলা কঠিন।’
এ ব্যাপারে ম্যান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিসবাহ সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।তবে কোম্পানির সঙ্গে জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের সব চুলাই বৈধ। তবে কাগজপত্র নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্যাস সংযোগ আবার চালুর চেষ্টা করছি।’
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন