• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন স্থগিত, প্রচারণা কি বন্ধ হবে?

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুলাই ২৭, ২০২১
নির্বাচন স্থগিত, প্রচারণা কি বন্ধ হবে?

করোনা পরিস্থিতির কারণে সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।এই নির্বাচন উপলক্ষ্যে লকডাউনের মধ্যেও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও সিলেট-৩ আসনের আওতাধিন দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় সমাবেশ, মিছিল, জমায়েত করেছেন তারা। ঢাকা থেকে নেতারা এসেও জনসভায় অংশ নেন।

এনিয়ে সমালোচনারও সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বহু মানুষের সমাগমের ফলে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।সোমবার ছিলো নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। প্রচার প্রচারণা শেষ করে এনেছিলেন প্রার্থীরা। ওই দিনই নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর নির্বাচন কমিশনও ভোট স্থগিত করে। এবার প্রশ্ন ওঠেছে, নির্বাচন স্থগিত হলেও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত থাকবে কি?

সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে প্রচার প্রচারণার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেট-৩ আসনে উপ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামও।তবে সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তিন প্রধান তিন প্রার্থীই জানিয়েছেন এই মূহূর্তে প্রচার প্রচারণা বন্ধ রাখবেন তারা।

শেষ মূহূর্তে এসে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন তারা।সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির বহিস্কৃত শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলেই ভালো ছিলো। সব প্রস্তুতি তো সম্পন্ন হয়ে গেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। একদিনে আর কি ক্ষতি হবে।তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আগেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিলো। করোনার কারণে নির্বাচন কমিশন আগেই ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিতে পারতো।

নির্বাচন পেছানোর কারণে নিজেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন জানিয়ে সাবেক এই সাংসদ বলেন, নির্বাচনের আগ মূহূর্তে আবার প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। এতোদিন ধরে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে হবে। তাছাড়া বারবার নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কারণে মানুষজনও ভোট থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। তার সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার নির্বাচন পরিচলানা কমিটির সহ-সভাপতি বাশির আহমদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুরো এলাকায় লাঙলের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে গেছে। ভোট স্থগিতের পেছনে তাদের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তারা হয়তো ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে।

আদালতের নির্দেশনার পর সোমবার ৩টি নির্বাচনী সভা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।আদালতের নির্দেশনা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভোটার নেতাকর্মী সবাই ভোটের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এলাকায় একটা নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছিলো। আদালতের নির্দেশনার কারণে সকলেই হতাশ। তবে আদালতের নির্দেশনা তো মেনে নিতে হবে। দুপুরের পর থেকে আমি সকল নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।

তবে সোমবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাবিবুর রহমান হাবিব লেখেন- ‘নির্বাচন স্থগিত মানে নির্বাচন শেষ নয়। নির্বাচনী কাজ থামবে না। সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বশক্তি দিয়ে বিজয়ের লক্ষ্যে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শত প্রতিকূলতাকে জয় করে বিজয়ীর বেশে ঘরে ফেরবো। এই হোক আমাদের সকলের অঙ্গিকার।’

এই তিনজন ছাড়াও সিলেট-৩ আসনে উপ নির্বাচনে ডাব প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া।
এ ব্যাপারে তার মন্তব্য জানা যায়নি।এ ব্যাপারে সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন স্থগিতে কমিশনের নির্দেশনা পেয়েছি। তবে প্রচার প্রচারণা নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে আমি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

গত ১১ মার্চ সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসনটি শূন্য হয়। ১৫ মার্চ নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই আসন শূন্য ঘোষণা করে। ২৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। কিন্তু দৈবদুর্বিপাকের কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী আরো ৯০ দিন সময় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় ইসি। এরপর গত ২ জুন ওই উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ তফসিলে ১৪ জুলাই ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে ইসি ১৫ জুন তারিখ পরিবর্তন করে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে ২৮ জুলাই।

তবে কয়েকজন আইনজীবীর দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেছে নির্বাচন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ সোমবার দুপুরে এ আদেশ দেন।সোমবার দুপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে এই উপ নির্বাচন হতে পারে। শোকের মাস আগস্টে ভোন এড়িয়ে যেতে চায় নির্বাচন কমিশন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন