করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে সব আনন্দ-উৎসব এখন ফিকে। বিশেষ দিনগুলোও বিশেষ হয়ে উঠছে না। কিন্তু সময়ের ঘড়ি তো আর থামানো যায় না। ঠিকই বয়ে চলে। বর্ষপঞ্জির পাতাও উল্টাতে হয়। সেভাবেই সময়ের আবর্তনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সামনে আবারও এসেছে ঈদ।
মহামারির দুঃখ-কষ্ট-ক্লেশ, স্বজন হারানোর বেদনাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে মানুষ কিছুটা হলেও উদ্দীপনা নিয়ে ঝুঁকছে উৎসবের দিকে। তবে গত তিনটি ঈদের মতো এবারের ঈদেও নেই নিরঙ্কুশ আনন্দঘন পরিবেশ। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে গিয়ে ধর্মীয় আচার পালনেও ঘটছে বিঘ্ন। তবু সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেই বুধবার সারাদেশের মুসলমানরা উদযাপন করতে যাচ্ছেন পবিত্র ঈদুল আজহা।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন এবং ছাড়ছেন। গত ১৫ ও ১৬ জুলাই দুই দিনে ৭০ লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। একজনের দুটি করে সিম হলেও দুই দিনে ৩৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। পরবর্তী দুই দিনে আরও বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সবমিলে ঈদ উপলক্ষে এক কোটির মতো মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।
মানুষের উৎসবমুখর গৃহযাত্রার মধ্যেই করোনায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ। এরপরও দলবেঁধে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। বাস-ট্রেনে এক সিট খালি রেখে চলাচলের নির্দেশনাও অধিকাংশ পরিবহনে কার্যকর হচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ের মতোই গাদাগাদি করে গ্রামে ফিরছে মানুষ। এ যাত্রার মধ্যে বিষাদের ছায়া দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সতর্ক করেছন তারা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত ও বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদ বা ঈদগাহে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে অজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। এছাড়া মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে।
মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। আবার এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। এতে শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ঈদ জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পরের হাত মেলানো যাবে না।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন