করোনা মহামারীর কারনে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চালু হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। কিছু স্থানে জমে উঠলেও কিছু স্থানে এখনো জমে উঠার অপেক্ষায় এসব পশুর হাট। তবে কঠোর লকডাউন চলাকালে প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের উদ্যোগে চালু হয় অনলাইন পশুর হাট। অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হলেও পিছিয়ে নেই অনলাইনে পশু বিক্রি। গত দুই সপ্তাহে সারাদেশে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮টি পশু বেচাকেনা হয়েছে অনলাইনে। এসবের বিক্রয়মূল্য ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ৫ লাখ ১ হাজার ৬৭২ টাকা। এই সময়ে সিলেট বিভাগে অনলাইনে পশু বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৫২টি। যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৮ টাকা। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ১৪ দিনে অনলাইনে ১ হাজার ৭৬৮টি কোরবানির পশু বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে পশু আছে ১ হাজার ৭৬৮টি। তার মধ্যে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ৬০২টি, আর বেসরকারি উদ্যোগে ১ হাজার ১৬৬টি। এসব অনলাইন বাজারে ১৪ দিনে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯২টি কোরবানিযোগ্য পশুর তথ্য আপলোড করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনলাইনে পশু বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৫টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার বাজারদর ৮৯৪ কোটি ৪৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৮ টাকা। পরের স্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৮৫১টি পশু বিক্রি হয়েছে ২৬১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৭ টাকায়।
রাজশাহী বিভাগে ২৯ হাজার ৩০০ গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে ১৬২ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯ টাকায়। খুলনা বিভাগে ৮ হাজার ১৪৮টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ৫৩ কোটি ৫৪ লাখ এক হাজার ২০০ টাকায়। বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৩৮৭টি গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ টাকায়।
সিলেট বিভাগে ২ হাজার ২৫২টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৮ টাকায়। রংপুর বিভাগে ১৯ হাজার ৯২৫টি পশু বিক্রি হয়েছে ১১১ কোটি ৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকায়। ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৬৫টি পশু বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকায়।
এ বিষয়ে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) দেবাশীষ দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছর প্রথম অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছিল। ওই বছর অনলাইনে ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত অনলাইনে যে পরিমাণ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে, তার থেকে বেশি প্রত্যাশা ছিল। তবে গত বছরের থেকে এ বছর ভালো করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, সামনে কোরবানির বড় অংশই অনলাইনে বেচাকেনা চলবে।
তিনি জানান, স্থায়ী পশুর হাটে ১৫ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুহাট চালু রাখার সুপারিশ করেছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৫ জুলাই থেকে পশুহাট বসা শুরু হয়েছে। হয়তো এখন অনলাইনে পশু বিক্রির প্রবণতা কিছুটা কমে যাবে। তারপরও যাঁরা হাটে যেতে চান না তাঁদের জন্য অনলাইন অবারিত হয়ে থাকল। ১৫ জুলাই ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩২টি কোরবানির পশু তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। ওই দিন বিক্রি হয়েছে ২৪ হাজার ৭৫টি পশু। ১৫৩ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যে পশুগুলো বিক্রি হয়েছে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫। তার মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫টি।
২০২০ সালে দেশের খামারি ও কৃষকেরা প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ গবাদিপশু প্রস্তুত রেখেছিলেন। তার মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সিলেট জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রুস্তম আলী জানান, গত ১৫ দিনে সিলেট জেলায় অনলাইনে ১৩৯৩টি পশু বিক্রি করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। বর্তমানে সিলেট জেলার অনলাইন পশুর হাটে সাড়ে ১৫ হাজারের অধিক পশুর তথ্য রয়েছে। সুত্র: জালালাবাদ
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন