কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিলেট নগরীর উপশহরে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে উপস্থিত প্রবাসীরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দালালদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা। টিকা নিবন্ধন করার জন্য প্রবাসীদের বোকা বানিয়ে অতিরিক্ত মুনাফালোভীরা।
নানা অযুহাত দেখিয়ে ২২০ টাকা বিকাশ পেমেন্টের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩৫০-৬০০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে উপশহর সি ব্লকের ৪১ নম্বর সড়কের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ভিড় করছেন প্রবাসীরা।
৩-৪ শতাধিত প্রবাসীর উপস্থিতি সেখানে স্বাস্থ্যবিধি গত কয়েকদিন থেকে উপেক্ষিত হচ্ছে। রবিবার (৪ জুলাই) দুপুরে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে এমন চিত্র দেখা যায়। করোনার টিকা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তাই সরকার তাদের বিনামূল্যে টিকা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগে প্রবাসীরা টিকার নিবন্ধনের জন্য সিলেট অফিসে ছুটে এসেছেন।
কাতার প্রবাসী নাজিম উদ্দিন বলেন, লকডাউনের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে শনিবার রাতে অনেক কষ্ট করে এসেছি সিলেটে। রাতে কুমারপাড়া এলাকার এক আত্মীয়বাসা থেকেছি। ভোরে রিকশা নিয়ে টিকা নিবন্ধনের জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে এসেছি। সকালে আসার পরেও দেখি আরও ৭০-৮০ জন চলে এসেছেন। অনেকেই নাকি রাতে অফিসের বারান্দায় ঘুমিয়েছেন।
দেশের অর্থনীতি মূল শক্তি হচ্ছে প্রবাসী। আর এই প্রবাসীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকা নিবন্ধনের জন্য। কোন নিয়ম নেই এখানে। যারা দালাল ধরে কাজ করছেন তাদের কাজ আগে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বিকাশ পেমেন্ট কিংবা যেকোন মাধ্যমে দেয়া হউক না কেন প্রত্যেকে সরসারি উপস্থিত থেকে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এতে অন্য কেউর কাগজ জমা দেয়া বা নেয়ার কোন সুযোগ নাই। সচেতন অনেক প্রবাসীরা নিজে নিজেই টাকা পেমেন্ট দিচ্ছেন। এতে ভোগান্তি ও খরচ উভয় কমেছে।
এ বিষয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপসহকারী পরিচালক মাহফুজ উল-আদিব বলেন, প্রবাসীদের কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেজন্য গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শনিবার (৩ জুলাই) টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩৬৪ জন। এমআরপি পাসপোর্টধারী প্রবাসীদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট দেয়া হচ্ছে। ভোগান্তি এড়াতে যেকেউ চাইলে আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই নিবন্ধন করতে পারবেন। যাদের পাসপার্ট ও ভিসা আছে শুধু তাদেরকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ২ জুলাই থেকে চালু হওয়া সিলেটসহ দেশের ৪২টি জনশক্তি অফিস, ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে বিএমইটির এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে। প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকল্পে বয়স প্রমার্জন ও অগ্রাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মীর বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ড নেই অথবা চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারির পূর্বের বিএমইটির স্মার্ট কার্ড আছে সে সব কর্মীর টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের সুবিধার্থে বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ২ জুলাই থেকে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে হবে। তবে জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত কর্মীদের নতুনভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না।
বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধিত কর্মীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির লক্ষ্যে সুরক্ষা এপস বা www.surokkha.gov.bd এর মাধ্যমে জরুরিভাবে টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। surokkha App এ রেজিস্ট্রেশন সফল হলে মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে টিকা সেন্টার ও টিকার তারিখ জানা যাবে। এ সংক্রান্ত মেসেজ না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশগামী কর্মীদের কোনো হাসপাতাল, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি বা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে জমায়েত হয়ে টিকা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই বলে জানান জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন