• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নির্দেশনা ভেঙে হাবিবের জমায়েত!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুলাই ২, ২০২১
নির্দেশনা ভেঙে হাবিবের জমায়েত!

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি করেছে সরকার। এই সময়ে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৯ ধরণের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।লকডাউন কার্যকরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও কঠোর অবস্থানে ছিলো প্রশাসন। মাঠে নেমেছে বিজিবি-সেনাবাহিনীও। এছাড়া অনেকগুলো ভ্রাম্যামান আদারত অভিযান চালিয়েছে জেলাজুড়ে। এসব অভিযানে লকডাউনের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যখন এমন কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, তখন সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা অমান্য করতে দেখা গেছে। তবে এ জন্য তাকে কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি।বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউনের প্রথমদিন বিকেলে নিজ নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় যান হাবিবুর রহমান হাবিব। সন্ধ্যায় বরইকান্দি ইউনিয়নের রায়েরগ্রাম জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এসময় মসজিদে জড়ো হওয়া মুসল্লীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন হাবিব।

রাতে নিজের ফেসবুকে কুশল বিনিময়ের একাধিক ছবি আপ করেন তিনি। এতে দেখা যায়, হাবিবসগহ উপস্থিত প্রায় কারো মুখেই মাস্ক নেই। সামাজিক দুরত্বের নির্দেশনা না মেনে সবাই গাদাগাদি করে আছেন।
অথচ গত বুধবার কঠোর লকডাউন চলাকালে মসজিদে নামাজ আদায়ে যেতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৯টি নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে বলা হয়- মসজিদের ঢোকার মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লিদেরকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে।প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওযু করে, সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

তবে হাবিবকে রায়েরগ্রাম জামে মসজিদে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময়কালে এসব নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি।এই সময় রায়েরগ্রাম জামে মসজিদে উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মসজিদে নামাজ শেষে জনাপাঞ্চাশেক লোক হাবিবকে ঘিরে ধরেন। তারা সামাজিক দুরত্ব না মেনেই জড়ো হন এবং করমর্দন করেন। এদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিলো না। এমনকি হাবিবের মাস্কও মুখের বদলে থুতনিতে লাগানো ছিলো।এ ব্যাপারে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সাথে বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।তবে রাতে হাবিবের ই-মেইল আইডি থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই মসজিদে জড়ো হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এতে বলা হয়, হাবিবুর রহমান হাবিব বৃহস্পতিবার (১ জুলােই) দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি ইউনিয়নের রায়েরগ্রাম রাস্তায় জলাবদ্ধতার খবর শুনে তাৎক্ষণিক রাস্তাটি পরিদর্শন করতে করেছেন।খবর সিলেট টুডে ২৪

পরে তিনি রায়েরগ্রাম জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
এসময় সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বরইকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি রইছ আলী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি সাইফুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামিম আহমদ, সিলেট জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সদরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সিলেট-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বুধবার (৩০ জুন) ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে অসুস্থ ব্যাক্তিবর্গকে দেখতে তাদের বাড়িতে গিয়ে এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে লকডাউনের নির্দেশনরা অমান্য করে দক্ষিণ সুরমার একটি কমিউনিটি সেন্টারে হাবিবের সমর্থনে সেন্টার কমিটি গঠনের জন্য সভা হয় বলে জানা গেছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শতাধিক আওয়া মী লীগ নেতাকর্মী অংশ নেন।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। এরপর ১৫ মার্চ এটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

আগামী ২৮ জুলাই মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি।সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন