বিশেষ প্রতিবেদনঃ সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার সংলগ্ন কাষ্টঘরের‘জল্লা’নামে পরিচিত জলাভূমি এবার নিশ্চিহ্ন করার টার্গেটে মাঠে নেমেছে প্রভাবশালী একটি মহল।পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সংশ্নিষ্টরা নির্বিকার।
সম্প্রতি পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে ভূমি আত্মসাৎ ও দখল বিষয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জৈনপুরের গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া ও নগরীর চালিবন্দরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মজলাই। বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হচ্ছে । এবার তারা আবাসন প্রকল্পের নামে জল্লা গিলে খেতে ঐক্য হয়েছেন মজলাই ও হিরা।
সূত্র জানায়, এই ঐক্য গড়তে স্থানীয় এক কাউন্সিলর মধ্যস্ততায় বৈঠক করেন। গত ২৮ জুন মজলাই ও হিরাসহ অন্যান্যরা নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আলোচনাক্রমে জল্লা ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য তারা সমঝোতা হয়। শর্ত থাকে মিডিয়া বন্ধ করতে একে অন্যের উপর অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রত্যাহার করার।
সমঝোতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।মঙ্গলবার ২৯ জুন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দু’জনই জানান, মনিন্দ্র চন্দ্রের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। বর্তমানে তাদের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে গোলাম কিবরিয়া হিরা জানান, গত ২৩ জুন একটি সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান মজলাইর বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করেছিলেন। পরে তিনি জানতে পারেন, তাকে কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের আত্মীয় ও হিতৈষী ব্যক্তি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ গত ২৮ জুন উভয়কে নিয়ে আলোচনাক্রমে ভুল বুঝাবুঝির অবসান করেন। তাই গত ২৩ জুনের সংবাদ সম্মেলনের সকল বক্তব্য প্রত্যাহার করেন তিনি।
হাবিবুর রহমান মজলাইও তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তিনি গত ২৭ জুন একটি সংবাদ সম্মেলনে তার মামা গোলাম কিবরিয়া হিরার বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করেছিলেন।
পরে তিনি জানতে পারেন, তার মামাকে কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। বিষয়টি তার মামা বর্তমানে বুঝেছেন।
তাই এ নিয়ে উভয় পক্ষের আত্মীয় ও হিতৈষী ব্যক্তি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ গত ২৮ জুন উভয়কে নিয়ে আলোচনাক্রমে ভুল বুঝাবুঝির অবসান করেন। ফলে তিনি গত ২৭ জুন হিরার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের সকল বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।
এদিকে, জল্লা ধ্বংস করে বিশাল এই জলাভূমির অনেক জায়গায় মাটি ভরাট করে প্লট তৈরী এবং বেশকিছু বহুতল ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কোথাও টিনশেডের ঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। খালি জায়গায় মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে প্লট হিসেবে বিক্রির জন্য। এবার পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় নগরীর আরেকটি জলাধার হারিয়ে যেতে বসেছে।
কাষ্টঘরের এই জল্লায় গড়ে উঠেছে মাদানী সিটি নামক একটি আবাসন প্রকল্প। ইতোমধ্যেই এই এলাকায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। আরও অনেক খালি প্লটে সাইনবোর্ডে মালিকের নাম-পরিচয় লেখা রয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন রয়েছেন।
এ আবাসন প্রকল্পের নেপথ্যে প্রভাবশালী কয়েকজন জড়িত থাকায় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকাশ্যে জলাভূমি ভরাট করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
হাবিবুর রহমান মজলাই এই জল্লা দখল করে তার নিজের জন্য একটি ২তলা ভবন ও একটি ৪ তলা ভবন একটি বিশাল কোলনী নির্মান করে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও জল্লার প্লট বানিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসার সাইনবোর্ড টানিয়ে এবং জাল কাগজপত্র তৈরি জায়গা জোর দখল করেই যাচ্ছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন