• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে মজলাই বাহিনীর জায়গা দখলের চেষ্টা

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২৪, ২০২১
সিলেটে মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে মজলাই বাহিনীর জায়গা দখলের চেষ্টা

সিলেট নগরীর কাষ্টঘর চালিবন্দরে মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ৪০০ শতক (চার একর) জায়গা জোরদখলের অপচেষ্টা করছে একটি চক্র। যার নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনের সাবেক নারী কাউন্সিলর দিবা রাণী দে বাবলির স্বামী মনিন্দ্র রঞ্জন দে। সাথে রয়েছেন হেতিমগঞ্জের অ্যাডভোকেট মহানন্দ পাল, সোবহানীঘাটের সুকেশ দাস ও আবু সাঈদ অভি ও ছড়ারপাড়ের হাবিবুর রহমান মজলাইসহ তার সহযোগীরা। ওই ৪০০ শতকের অন্তর্গত ১১২ শতক ভূমি আব্দুল মছব্বির ও আব্দুল বারীর কাছ থেকে ২০০১ সালে ক্রয় করেন দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের মৃত আব্দুর রবের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া ও অপর প্রবাসী ফয়সল আহমদ। তাদের ক্রয়কৃত জায়গাও জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে মনিন্দ্র রঞ্জন দে ও তার সহযোগীরা আত্মসাত ও জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বুধবার (২৩ জুন) বেলা ২টায় পূর্ব জিন্দাবাজারে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া।

লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া বলেন, মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার জেএল ৯১, ৩৬৩১ ও ৩৬৩২/১ নং এস.এ খতিয়ানে, ৪৭৭৩ বিএস খতিয়ানে, ৯১৬০ নং নামজারি খতিয়ানে ৭৩৫৪ এসএ দাগ ও ৩১০৬৯ (৩১২৩৫/৩১২২১) ৩১২২১ বিএস দাগে বিদ্যমান ১১২ শতক (১.১২ একর) মনিন্দ্র রঞ্জন দে চক্র দীর্ঘদিন ধরে গ্রাসের অপচেষ্টা করে আসছে। মনিন্দ্র রঞ্জন দে এই ভূমি জবরদখলের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের ভুয়া একটি মামলার রায়ের একটি কপি জাল-জালিয়াতি করে ২০১৬ সালে সিলেট সাব জজ দ্বিতীয় আদালতে আমি ও প্রবাসী ফয়সল আহমদসহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মনিন্দ্র ভট্টাচার্য্য চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে বাদি দেখায় তারা। পরবর্তীতে গত ৭ জুন আদালতে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন তিনি মামলার বাদি নন। তিনি কাউকে আমতোক্তারনামাও দেননি। আদালতে স্বীকারোক্তি দেন তিনি এবং তার প্রকৃত নাম কাজল ভট্টাচার্য্য জানান। সবকিছু মনিন্দ্র রঞ্জন দে’র প্রতারণা বলেও তিনি আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

মনিন্দ্র রঞ্জন এ মামলার ক্ষেত্রে আদালতের রেকর্ডিয় ৫০/১৯৭৮ সালের একটি মামলার কাগজপত্র জাল করে মামলাটি দায়ের করেছে। যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া আরও অভিযোগ করেন, মনিন্দ্র রঞ্জন দে সিলেটের আলোচিত জালিয়াত ও ভূমিখেকো। তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জাল টাকা ও পাসপোর্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মর্মে ২০০৫ সালের একটি মামলা দায়ের করা হয়। মনিন্দ্র রঞ্জন দে’র বিরুদ্ধে সরকারি জমি আত্মসাতের অভিযোগে নগরীর যতরপুর এলাকাবাসী ২০১১ সালে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দিবা রাণী দে ও তার স্বামী মনিন্দ্র রঞ্জন দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ওই চক্রটি কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বারবার একই অপকর্মে লিপ্ত হন তারা। কিন্তু তারপরও এ দুজনের দৌরাত্ম্য থামেনি। ক্বারি মাওলানা আবদুল মতিন নামক জনৈক ব্যক্তি বাদি হয়ে এই মনিন্দ্রের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেনছেন। ডলি রানী চৌধুরী নামের একজন মহিলার অভিযোগে মনিন্দ্র একবছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেছেন।

গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, উল্লেখিত ভূমিতে আমরা প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমরা বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে মনিন্দ্র রঞ্জন দে’র মতো আরেক পেশাদার ভূমিখেকো ছড়ারপাড়ের হাবিবুর রহমান মজলাই আমার ভূ-সম্পত্তিতে জোরপূর্বক মাটিভরাট করেছে। তারা মসজিদের সাইনবোর্ড স্থাপন করে কিছুদিন পরপরই মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। আমার ভূমিকে মসজিদের জমি উল্লেখ করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ ওই ভূমির প্রকৃত মালিক আমি। আমি ছাড়াও ওই জায়গার বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে প্লটের রাস্তার উন্নয়নের নাম করে চাঁদাবাজি করে আসছে মজলাই। যারা টাকা দিতে অসম্মত হন তাদের গালিগালাজসহ হামলা-মামলার হুমকি দেন তিনি। মজলাই ও মনিন্দ্র রঞ্জন দে-এর জুলুম-নির্যাতনে আমরা ওই ভূমির প্রকৃত মালিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে বিভিন্নসময়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সর্বপ্রথম এই ভূমি আত্মসাতের লক্ষ্যে গোলাপগঞ্জের বাঘা এলাকার বাসিন্দা মাওলানা রেজাউল করিম কাসেমী ও তার সহযোগীরা ‘মাদানী বিল্ডকম প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক এক কোম্পানি তৈরি করে জায়গা জবরদখল করে জাল দলিল তৈরি করেন। তারা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে আদালত মাওলানা রেজাউল করিম কাসেমী ও সহযোগীদের দোষী সাব্যস্থ করে। তারা পলাতক রয়েছে।

গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই চক্রটিকে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন