• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

নগরীর উপশহরে কাজের মেয়েকে নির্যাতন, থানায় গিয়ে সমঝোতা

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২৩, ২০২১
নগরীর উপশহরে কাজের মেয়েকে নির্যাতন, থানায় গিয়ে সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের বাসায় তরুণী গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ উঠার পর বুধবার বিকেলে সিলেটে তুলকালমা কাণ্ড ঘটে গেছে। তবে পুলিশ বলছে ঘটনা এতটা সিরিয়াস নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের স্ত্রী ও তাঁর গৃহকর্মীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মূল বিষয়টি বেরিয়ে আসে। গৃহকর্মীকে শারীরিকভাবে কখনও নির্যাতন করা হয়নি বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

পরিবশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী পূবালী ব্যাংক সিলেট দক্ষিণ সুরমার কদমতলি শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার।

জানা গেছে, সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরের ই-ব্লকের ১ নং রোডের ১১ নং বাসা ফিরুজা মঞ্জিলের ৪ তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন।

বুধবার সকালে এমরান হোসেনের বাসার একটি বাথরুম থেকে গৃহকর্মী রুনার চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। এসময় তাকে বাথরুমে দরজা লাগিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে বলে সে অভিযোগ করে এবং মানুষকে ডেকে তাকে উদ্ধারের অনুরোধ জানায়। রুনার অভিযোগ শুনে এমরানের প্রতিবেশী বাসার বাসিন্দারা সিসিকের ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিমকে খবর দেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে শাহপরাণ থানাপুলিশকে খবর দেন। বিকেল ৪টার দিকে একদল পুলিশ এমরান হোসেনের বাসায় পৌঁছলে তার স্ত্রী ফারহানা প্রথমে পুলিশ বাসায় ঢুকতে বাঁধা দেন। পরে কয়েকজন মহিলা পুলিশ ঘরে ঢুকে গৃহকর্মী রুনাকে বের করে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তবে পুলিশ ও আমাদের প্রথমে ঘরে ঢুকতে দেননি ফারহানা। এসময় কয়েকজন মহিলা পুলিশ তাকে বুঝিয়ে ঘরে ঢুকেন এবং গৃহকর্মী কিশোরীকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের ভাষ্যমতে- পরিবশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের স্ত্রী গৃহকর্মী রুনাকে প্রায় নির্যাতন করতেন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরিবশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী। তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, গত মাসের ২২ তারিখ ওই মেয়ে আমাদের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে আসি। কিন্তু আসার পর থেকেই সে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এবং আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার বায়না ধরে। যার মাধ্যমে তাকে আমরা পেয়েছিলাম সেই ব্যক্তির কাছে আগামীকাল ওই মেয়েকে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু এরই মাঝে আজ সে আমার দুই সন্তানকে মারধর করে বাথরুমের ভেতর গিয়ে নিজেই সিটকিনি লাগিয়ে অহেতুক চিৎকার-চেচামেচি করে একটি বিব্রতর পরিবেশ তৈরি করেছে।

রুনার শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ফারহানা আহমদ চৌধুরী বলেন, এটি সে মাঝে মাঝে নিজেই নিজেই করে। তাকে নাকি ভূত ধরে- এই ধারনা থেকে সে নিজেই এটি করে। তবে আমার সামনে করতে চাইলে এটি আমি বাঁধা দেই।

এদিকে, বিকেল ৫টার দিকে ফারহানা আহমদ চৌধুরী ও গৃহকর্মী রুনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় শাহপরাণ থানাপুলিশ। শেষ খবর পাওয়া (সন্ধ্যা ৭টা) পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রুনার ইচ্ছে অনুযায়ী তার স্বজন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক এমরান হোসেনের জিম্মায় দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরীকেও ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় জানান, ঘটনা আসলে ততটা সিরিয়াস নয়। থানায় আসার পর দুপক্ষকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় গৃহকর্মী রুনা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে মাঝে মাঝে তাকে বকাঝকা করা হয়- এ কথাটি বলেছে।

ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী আমাদের জানান- তিনি কখনও রুনার শরীরে হাত তুলেননি। তবে মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমি ও কাজ না করার কারণে মাঝে মাঝে বকঝকা করেন।

বুধবারের ঘটনার বিষয়ে ফারহানা আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সকালে অফিসে যাওয়ার আগমুহুর্তে খেলাচ্ছলে রুনা আমার দুই সন্তানের শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দিতে চায়। এতে আমার বড় সন্তান ভয় পেয়ে বাথরুমে গিয়ে লুকায়। কিন্তু রুনা বাথরুমে গিয়েও তার শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে বাথরুমে কিছুটা মরিচের গুড়ো পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আমি অফিসে চলে যাওয়ার পর সে নিজেই বাথরুমের ভেতরদিকে ছিটকিনি লাগিয়ে চিৎকার-চেচামেচি করে মানুষ জড়ো করে।’
অবশেষে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন