সিলেটে বেড়েছে কিশোর অপরাধ। বিভিন্ন নামে ‘গ্যাং’ তৈরি করে সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন রকম অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা ঘটাচ্ছে মারামারি, অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণকাণ্ড। রাস্তায় মেয়েদের করছে ইভিটিজিং- যৌন হয়রানি।
এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের কারণে আতঙ্কিত সিলেটের মানুষ। প্রকাশ্যে সংঘঠিত অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফলে বেপরোয়া কিশোরদের হাতে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন সিলেটের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
তবে ‘কিশোর গ্যাং’ নামক জিনিসটি নিশ্চিহ্ন করতে সিলেটে মাঠে নেমেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-৯। ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে এলাকা ও থানাভিত্তিক তালিকা। চলছে যাচাই। ভ্যারিফাই শেষে কিশোর গ্যাং দমনে সিলেটে খুব শীঘ্রই অ্যাকশনে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বিশেষ বাহিনী।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় কিশোর গ্যাং। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও রয়েছে এমন গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে এমন একাধিক গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রায়ই এসব গ্যাংয়ের কিশোররা জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে। এক গ্রুপের সদস্যকে অন্য গ্রুপের সদস্যরা তুলে নিয়ে মারধর, পাল্টা প্রতিশোধ- এসব ঘটনা এখন সিলেটের নিত্যদিনের।
সম্প্রতি সিলেটে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে বেপরোয়া কিশোররা। কয়েকদিন আগে সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে হামলা চালায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ওই হামলায় অংশ নেয় শতাধিক কিশোর। নগরভবন লক্ষ্য করে তাদেরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। সিটি করপোরেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দৃশ্য ধরা পড়েছে। রিকশাচালকদের পক্ষ নিয়ে হামলার জন্য একটি মহল কয়েকটি কিশোর গ্যাং ভাড়া করেছিলো বলে জানা যায়।
এর আগে সন্ধ্যারাতে দক্ষিণ সুরমার নভাগ গ্রামের হেলাল উদ্দিনের কিশোর ছেলে তৌফিকুল ইসলাম তামিমকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেতে চায় একদল কিশোর। এসময় তামিমের শোরচিৎকার শুনে তার মা-বাবা ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই ৮ কিশোরকে আটক করেন। তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে আরও ৮ কিশোর এগিয়ে আসলে তাদেরকেও আটক করে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ১৬ কিশোরকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১১টায় স্বজনদের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এছাড়াও গত ২৭ মে রাতে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক কিশোরী মোহন স্কুলের সামনে থেকে দুই কিশোরকে অপহরণ করে কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ জন সদস্য। পূর্ব জিন্দাবাজার আসার পর স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে অন্যরা পালিয়ে গেলে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এরকম কিশোর গ্যাং নগরীর আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কাজিটুলা, কুমারপাড়া, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, ভাতালিয়া, লামাবাজার, মেডিকেল রোডসহ পুরো সিলেট বিভাগের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তবে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনায় সিলেটে বেরোয়া কিশোর গ্যাং নিশ্চিহ্ন করতে মাঠে নেমেছে র্যাব-৯।
র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি ওবাইনের বরাত দিয়ে এক অপারেশন কমান্ডার সোমবার (২১ জুন) সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘ডিজি স্যারের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৯ সিলেটে কিশোর গ্যাং দমনে মাঠে নেমেছে এবং দ্রুত কাজ করছে। ইতোমধ্যে নগরীতে এলাকাভিত্তিক এবং সিলেটের ৪ জেলায় থানাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে কিশোর গ্যাং-এর তালিকা তৈরি করা হয়ে গেছে। পাওয়া তথ্যগুলো এখন যাচাই চলছে। দ্রুত তথ্য ভ্যারিফাই শেষ করে অ্যাকশনে নামবে র্যাব-৯ এবং অপরাধী কিশোরদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ওই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এর বাইরেও কোনো কিশোর বা তাদের গ্যাং অপরাধকাণ্ড ঘটানোর সময় হাতে-নাতে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন