• ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

তিন প্রার্থীই ব্যবসায়ী

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২১, ২০২১
তিন প্রার্থীই ব্যবসায়ী

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ছয়জন। দুইজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় লড়াইয়ে আছেন চারজন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র (বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) ও জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থীই ব্যবসায়ী। অপরজন বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া নিজের পেশা কৃষি হিসেবে উল্লেখ করেছেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায়।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব প্রবাসী পল্লী গ্রুপ নামের একটি আবাসন কোম্পানির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক প্রিন্স গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান। এ ছাড়া প্রিন্স রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড, প্রিন্স মেডিক্যাল সেন্টার ও সিলেট সিটি মেডিক্যাল সেন্টার নামে আরও তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (সম্প্রতি বহিষ্কৃত) শফি আহমদ চৌধুরী আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান অ্যালবার্ট ডেভিট প্রাইভেট লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন।

চার প্রার্থীর মধ্যে আয় সবচেয়ে বেশি শফি আহমদ চৌধুরীর। আর আবাসন ব্যবসায়ী হলেও হাবিবুর রহমান নিজের কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আধিক্য প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগে সংসদে আইনজীবীদের প্রাধান্য দেয়া হতো। কেননা সংসদ আইন প্রণেতাদের জায়গা। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি সংসদে ব্যবসায়ীদের আধীক্য লক্ষ করা গেছে। সরকার বর্তমানে ব্যবসায়ী নির্ভর হয়ে গেছে। ইদানিং বাজেটে ব্যবসায়ীদের বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে।’

দীর্ঘদিন ধরেই দেখতে পাচ্ছি রাজনীতি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে ব্যবসায়ীরাই মূল্যায়িত হন বেশি। মাঠের রাজনীতিবিদরা উপেক্ষিত থেকে যান। এটা রাজনীতি ও দেশে জন্য মঙ্গলজনক নয়, এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। আমরা চাই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে যাতে মনোনয়ন দেয়া হয় এবং সকলের অংশগ্রহণ থাকে সংসদ নির্বাচনে।’

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীর বার্ষিক আয় ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা। নিজ নামে ও জমা মিলিয়ে ব্যাংকে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫১২ টাকা। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তার নিজ নামে শেয়ার রয়েছে। রাজধানী ঢাকার গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডে নিজ নামে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। ৪৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৭ টাকা মূল্যের একটি নতুন (রেইন রোভার জিপ) গাড়ি ও ২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পুরোনো গাড়ি রয়েছে।

স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তিনি মোট ৪৯ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক। তার ৭ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭১ টাকা ঋণ রয়েছে। শফি চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় বার্ষিক আয়ের অংশে এই প্রার্থীর কোনো তথ্য দেয়া নেই। তবে কৃষি খাত থেকে তার স্ত্রীর বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৫০ টাকা আয় হয়।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাবিবুরের নামে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩০ টাকা রয়েছে। নিজ নামে ৫২ হাজার ২৪৪ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৯ হাজার ৪৪৮ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। নিজের নামে রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ শেয়ার, যার মূল্য ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। নিজের নামে ঢাকার পূর্বাচলে আছে ৭ কাঠার প্লট। হলফনামায় এর মূল্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে।যৌথ মালিকানায় হাবিবুরের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী লিমিটেডের নামে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

হলফনামায় আয়ের বিষয়ে উল্লেখ না করা প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান রোববার বলেন, ‘এটা ভুলবশত হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব।’

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিকের ব্যবসা থেকে বার্ষিক ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নির্ভরশীলরা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ২২ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। নিজের নামে ২০ লাখ ৭০ হাজার ১৬৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে।

তিনি নিজের নামে ১০ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, কোম্পানির নামে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন। আতিকুরের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নিজের নামে দক্ষিণ সুরমার হরগৌরী মৌজায় ১৫ শতক জমি, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ধানি জমি। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ঢাকার সাঁতারকুল মৌজায় (নিকুঞ্জ) ১০ কাঠা জমি, যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন।

এসব ছাড়াও নিজের, স্ত্রীর ও ছেলের নামে এবং যৌথ মালিকানায় ঢাকার নিকুঞ্জ-২, রামপুরা উলন মৌজা, বারিধারা নর্থ, বারিধারা পার্ক রোড, গুলশান, বনানী, ঢাকার কালাচাঁদপুরে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ আতিকুরের নিজের নামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। আতিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি পাস।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন। তিনি কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও দোকানভাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। নিজের নামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ৬০ হাজার টাকার ১ ভরি স্বর্ণ, ১০ হাজার টাকার মুঠোফোন, ৬০ হাজার টাকার আসবাব ও অস্থাবর সম্পদ তার। স্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজের নামে ১০ দশমিক ১৪৫ একর কৃষিজমি, ৩ লাখ টাকার ১ শতক জমি, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৮ কক্ষের বসতঘর ও স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ৬৯ একর কৃষিজমি। তার কোনো ব্যাংকঋণ নেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

আগামী ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচনে ভোট হবে। ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •