• ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভূমি দস্যু মজলাই, জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে মানুষকে হয়রানি করাই তার কাজ

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২০, ২০২১
ভূমি দস্যু  মজলাই, জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে মানুষকে হয়রানি করাই তার কাজ

বহু অপকর্মের হোতা সিলেট নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়ারপার এলাকার হাবিবুর রহমান মজলাই ওরফে ভূমী খেকো মজলাই । দলিল জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভূমি দখল, রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া নামজারি করে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া- এমন অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

এলাকায় ভূমির দালাল, এমনকি ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাই তার কাজ। জাল-জালিয়াতি করেই তিনি রাজার হালে চলেন। অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অসহায় ব্যক্তিবর্গরা।

ছড়ারপার এলাকার অধিকাংশ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান, মজলাই মিয়া বিভিন্ন কৌশলে দাগ, খতিয়ান, মাঠপর্চা, এসএ পর্চা, নামজারি মোকদ্দমা ও দলিলের নাম্বার সংগ্রহ করে তা দিয়ে শুরু করে তার জাল জালিয়াতির কাজ।

খবর নিয়ে জানা যায় যে,অনেক লোকজন তার জাল জালিয়াতিতে সর্ব হারা হয়ে পথে বসে আবার অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে নগরীর ছড়ারপারের গোয়ালীছড়ার অংশ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন । ইতিমধ্যে তিনি চারতলা ফাউন্ডেশনের বাসার কাজ প্রায় শেষ করেছেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান গৃহ নির্মাণকারী মজলাইকে ৭ দিনের মধ্যে গৃহ অপসারণের নোটিশ দেন। কিন্তু ভবন অপসারণ না করে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে শুধু নোটিশের জবাব দিয়েছেন মজলাই।

প্রকাশ্যে সরকারি জায়গায় সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই তিনি কীভাবে বাড়ি নির্মাণ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়ারপার নিবাসী হাবিবুর রহমান মজলাই সরকারি প্রায় ২ শতক ছড়া ও ডোবা দখল করে বাসা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। জায়গাটি মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার জেএল নং ৯১, দাগ নং ৬৫৬৮, খতিয়ান ১-এর অন্তর্গত।

এর অবস্থান ছড়ারপার জেসমিন ভিলার পাশে। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গাটি হলেও ছড়া হওয়ায় তা রক্ষণাবেক্ষণ করে সিটি করপোরেশন। ওই জায়গাটি অস্থায়ীভাবে ইজারা নেওয়ার জন্য ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর হাবিবুর রহমান মজলাই সিটি করপোরেশনে আবেদন করেন। যদিও ছড়া ইজারা দেওয়ার এখতিয়ার সিটি করপোরেশনের নেই।

এছাড়া মজলাই ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়র বরাবরে স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আরেকটি আবেদন করেন। এ অবস্থায় ইজারা ও অনুমতি পাওয়ার আগেই চারতলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ভবন নির্মাণের বিষয়টি জানতে পেরে ৭ জুলাই সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন গৃহ নির্মাণ অপসারণের জন্য হাবিবুর রহমান মজলাইকে নোটিশ (স্মারক নং-এসএসসি প্রকৌ/পূর্ত/১/১০০/২০) প্রদান করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়।

নোটিশ প্রদান করা হলেও মজলাই গৃহ অপসারণ না করে গত ১৯ জুলাই ওই নোটিশের জবাব দেন। জবাবে তিনি উলেল্গখ করেন, ওই জায়গা তিনি ইজারা গ্রহণ করেছেন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত খাজনাও দিয়েছেন। নোটিশ পাওয়ার পর তিনি কাজও বন্ধ রেখেছেন বলে জবাবে উলেল্গখ করেন। অথচ তার এ ইজারার কোনো সত্যতা স্বীকার করেনি সিটি করপোরেশন।

এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে জোরপূর্বক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর লোকজনকে বিতাড়িত করে বাসা বাড়ি দখল, দলিল জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত হাবিবুর রহমান মজলাই সহ তার ৬ সহযোগীর বিরুদ্ধে। (নং- ১৭৩৬/১৭) মামলা হয়।

এ ঘটনায় বাসার মালিক গংদের পক্ষে আমমোক্তার মুজাহির হোসেন জুনু সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনাটি তদন্ত করতে পিবিআই সিলেটকে আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে পিবিআই’র পক্ষ থেকে আদালতে একটি অনুসন্ধানী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআই সিলেটের এসআই লিটন চন্দ পাল। এতে তিনি উলে­খ করেন, হাবিবুর রহমান মজলাই সহ উপরোক্ত আসামীরা বাদী পক্ষের উক্ত বাসাটি জোরপূর্বক নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া আমমোক্তারনামা ও মিথ্যা বানোয়াট দলিল তৈরী করে বাসাটি দখল করে ভাড়া আদায় করে যাচ্ছিলেন।

এসব জালিয়াতির কারনে তাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৪/৩৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়। তদন্তে আরো জানা যায়, উপরোক্ত মজলাই চক্র সিলেটের রেজিস্টারী অফিসের বালাম বইয়ের পাতা ছিড়ে এবং আটা লাগিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া দলিল তৈরী করে নেন।

এলাকায় মানুষ তাকে ভূমির দালাল হিসেবেই বেশি চেনে।এমনকি তাকে ‘ভূমিদস্যু মজলাই ’ও বলে ডাকে অনেকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন তার একটাই কাজ, ভূমি অফিসে যাওয়া, দালালি করা।

আর নিরীহ মানুষের দুর্বলতার সুযোগে হয়রানি করা। তিনি জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের ভূমি দখল করে চলেছেন।

একইসঙ্গে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকেও জমি দখল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন বড় অংকের টাকা।

শুধু তা-ই নয়, হাজী মজলাই প্রতিনিয়ত নিজের জন্য বা টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া পর্চা, খতিয়ান ও নামজারিও করে আসছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সোবানিঘাট কাস্টঘর এলাকার মানুষ।
হাজী মজলাই দখলবাজির শিকার হয়ে তার বিরুদ্ধে জাল দলিলের মামলাও করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে একাধিক মামলার আসামি তিনি। এরপরও তার অপকর্ম-জালিয়াতি কমছে না, বরং বাড়ছে দিন দিন।

এছাড়া কৌশলে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা তার আরেকটি জালিয়াতির পদ্ধতি। এভাবে তিনি উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা বাস্তবায়ন করেন। একইসঙ্গে খাস জমি লিজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিম্ন আয়ের সহজ-সরল মানুষকে ঠকানোও তার একটি কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কাজে হাজী মজলাই একা নন। তার সঙ্গে আছে একটি চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মজলাই ও তার ছেলে কয়েছ সহ গুটিকয়েক । তারা পরস্পরের যোগসাজশে জাল দলিল তৈরি করে সেটা দিয়ে আরেকজনকে জমি দখল করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে পান মোটা টাকা। যা আবার ভাগ হয় তাদের চক্রের সদস্যদের মধ্যে।

এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমাও তাদের হাত দিয়েই বেশি চলে। এমনকি অভিযোগ আছে, কেউ যদি জায়গা বিক্রি করতে চান, তাহলে তাদের একটা পরিমাণ টাকা আগে দিতে হয়। না হলে রেজিস্ট্রি করার সময় ঝামেলা লাগিয়ে হুমকি দেন।
মজলাই নিজেকে পরিচয় দেন মানবাধিকার নেতা । তার সঙ্গে অনেক বড় লেভেলের মানুষের সাথে যোগাযোগ আছে। আর এ সুবাদেই চলে তার এসব অপকর্ম। এও জানা গেছে, ভূমির সব পর্যায়ের জাল কাগজপত্র আছে তার কাছে।

এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হচ্ছে না কেনো,
ভুক্তভোগী দের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান , মজলাইর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এছাড়া এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। কেউ বড় কোনো বিপদে না পড়লে দেন-দরবার, মামলায় যেতে চান না। পাশাপাশি এলাকার মুরুব্বি তিনি তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলছে না। আশা করছি, প্রশাসন এর একটা ব্যবস্থা নেবে।

এই বিষয়ে হাবিবুর রহমান মজলাই মিয়ার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন জৈনক এক ব্যাক্তি হীরা মিয়ার নাম ও জায়গা দখলের অভিযোগ শিকার করেন তিনি এবং হাবিবুর রহমান মজলাই ও হীরা মিয়ার মধ্যে মামা-ভাগ্না পরিচয়ে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যপারে জানতে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এস এম আবু ফরহাদ মুঠোফোনে কয়েক বার যোগাযোগ করার চেস্টা করেলে ফোন রিসিভ হয়নি।

আগামী পর্বে মজলাই মিয়া ও হীরা মিয়া কি ভাবে নাটক সাজিয়ে অন্যের জায়গা দখল করে বিস্তারিত,,,,,!

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •