নিজস্ব প্রতিবেদক::তক্ষক গিরগিটির একটি প্রজাতি, ইংরেজি নাম গেকো। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছাদের ফাঁকফোকরে আর পুরোনো গাছের কোটরে এরা থাকে। নামের সঙ্গে অনেকে পরিচিত হলেও পতঙ্গভুক এই প্রাণীকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য খুব কম লোকেরই হয়েছে। অথচ কমবেশি সারা দেশেই প্রাণীটি পাওয়া যায়। তারপরও যে এদের দেখা যায় না, তার কারণ লাজুক স্বভাব।
সহজে এরা মানুষের সামনে আসে না। তার ওপর প্রাণীটি আবার নিশাচর। তবে দর্শন না পেলেও তক্ষকের আওয়াজ কিন্তু শোনা যায় নিয়মিত। ‘কককক’ দিয়ে শুরু হয় এই আওয়াজ, এরপর স্পষ্ট করে ‘টক্কে টক্কে’ করে ডেকে ওঠে কয়েকবার।অদ্ভুত আওয়াজ আর অন্তরাল স্বভাবের কারণে প্রাণীটি নিয়ে অনেক ধরনের গল্পগাছা ও কুসংস্কার আছে।লোকচক্ষুর আড়ালে এই তক্ষক নিয়ে অন্তত এক যুগেরও বেশি সিলেটজুড়ে রীতিমতো উন্মাদনা চলে আসছে। তক্ষক ধরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে একদল মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। বেচা-কেনার নেশায়ও ছুটছে সেই মানুষগুলো।
সেই দলে সাধারণ লোক যেমন আছেন, আছেন সামাজিকভাবে প্রভাবশালী মানুষও, তেমনি আছে পেশাদার প্রতারকও।অনেকে আবার কোটিপতি হওয়ার আশায় বাড়িতে বন্দি করে এসব বিপন্ন প্রাণী তক্ষক পুষছেন। বিপন্ন এই প্রাণী তক্ষক ধরে হুজুগের বশে পাচার করার ঘটনা বেড়েছে দিনদিন। আর একে কেন্দ্র করে বাড়ছে নানান অপরাধ। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে এসএমপি’র শাহপরাণ (র.) মডেল থানার শাহপরান (র.) মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।গেল মে মাসের ৮ তারিখ শনিবার রাতে সিলেটের শাহপরাণ (রহঃ) থানাধীন শাহপরান মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এক এএসআই নিজের সোর্স মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে একটি তক্ষক উদ্ধার করেন। এ সময় তক্ষক পাচারের অপরাধে পাচারকারী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে আটকও করেন। পরে আবার অদৃশ্য কারণে পুলিশ আটক হওয়া পাচারকারী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে ছেড়েও দেন। অভিযোগ উঠেছে উদ্ধার হওয়া তক্ষকসহ আটক পাচারকারী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে সেই এএসআই ও ফাঁড়ির ইনচার্জ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফাঁড়িতেই রফাদফা করে ছেড়ে দেয়ার।
মূল্যবান এই প্রাণীটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ নগরীতে তোলপাড় চলছে। শাহপরান রহঃ ফাড়ি পুলিশ কর্মকর্তারা এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন।ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীটি বহু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে । আর টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে স্থানীয় পুলিশের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে এই ঘটনাটির প্রকৃত ঘটনা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কেউই জানেন না! অনুসন্ধানে ভেসে ওঠে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এদিকে সেই এএসআই এই তক্ষক আটকের বিষয়টি নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য দফায় দফায় তদবির ও বৈঠক করছেন । এমনকি সাংবাদিকদেরকে ম্যানেজ করার জন্য টাকারও অফার করেন! তাতেও যখন লাভ হয়নি, তখন সেই এএসআই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দেয়া শুরু করেন।
ঘটনা গত ৮ মে শনিবারের। শাহপরাণ থানাধীন কুশিরগুল এলাকা থেকে তক্ষকসহ পাচারকারী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে আটক করেন শাহপরাণ (র.) মডেল থানাধীন শাহপরান মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই আয়াতউল্লাহ। সেই সময়ে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। তবে মানবতার কারনে তিনি সংবাদ প্রকাশ করেননি।
পরে রাতেই তক্ষকসহ পাচারকারী দলের সক্রিয় দুই সদস্যকে ছেড়ে দেয়া হয়! ফাঁড়ির ইনচার্জও বিষয়টি তার সংশ্লিষ্ট থানায় জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি! তাই চাঞ্চল্যকর এই তথ্যটি পায়নি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া শাখা। যদি পেতেন অবশ্যই গণমাধ্যমে পাঠানো হত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ মে শনিবার রাতে শাহপরাণ থানাধীন কুশিরগুল এলাকা থেকে উত্তর পীরেরচকের বাসিন্দা ক্যান্টনমেন্টের ক্লিনার মুরাদ ও কুশিরগুল এলাকার বাসিন্দা গপেন পাত্র’র ছেলে সুদেন পাত্র -কে একটি তক্ষক কাপড়ের নেট দিয়ে বক্সসহ আটক করা হয়। যার ভিডিওচিত্র আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরাণ (র.) ফাঁড়ির এএসআই আয়াতউল্লাহ জানান- আটককৃতদের মামলা দিয়ে চালান দেয়া হয়েছে। তিনি এবিষয়ে আর কিছুই জানেন না। এবিষয়ে কিছু জানতে হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
কিন্তু অনুসন্ধানে সিলেট আদালতে সংশ্লিষ্ট শাহপরাণ জিআর ও শাহপরাণ নন জিআর কোথাও পাচারকারী মুরাদ ও সুদেন-এর কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, পীরেরচকের বাসিন্দা ক্যান্টনমেন্টের ক্লিনার মুরাদ ডিফেন্সের লোক হিসেবে তাকে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ এখানে তাদের মানবতা দেখিয়েছে। তবে পুলিশ সেই সদস্য হয়তো সেই সময় ভুলে গিয়েছিলেন আইনে উর্ধ্বে কেউই নন।
শাহপরান (র.) মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আটকের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দুই তক্ষক ব্যবসায়ীকে ওসি স্যারের সাথে আলাপ করে থানায় পাঠিয়েছি। তক্ষক কোথায় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দেয়ার কোনো ভিডিওচিত্র বা ছবি আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনিও জানান, ওসি স্যারের সাথে আলাপ করলে তিনিই বলবেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের এ বিষয়ে জানান, তিনি খবর নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সাথে আলাপও করেছেন। এবিষয়ে একটি সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে। তক্ষক বিষয়ে তিনি বলেন, ফরেস্টের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাণীটিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে শাহপরান (রহঃ) থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আনিসুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছিলো কিন্তু আসামিদের কে জালালাবাদ কেন্টনমেন্টের পরিচ্ছন্ন কর্মী বিবেচনা করে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।তক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আসলে তক্ষকটি যখন একটি প্রাণী তখন এটাকে প্রাণী সম্পদ বিভাগে জমা দেয়া উচিত ছিলো এটা তো এ ভাবে ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি আমার মনে হয়।বিস্তারিত ভিডিওসহ আসছে
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন