• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে জৈন্তাপুর সীমান্তে বেপরোয়া চোরাকারবারিরা

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ৩, ২০২১
কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে জৈন্তাপুর সীমান্তে বেপরোয়া চোরাকারবারিরা

বিশেষ প্রতিবেদকঃ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত পথে চাল, সারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সীমান্তের বিভিন্ন পথে ভারত থেকে তারা অবাধে নিয়ে আসছে গরু-মহিষ, কসমেটিক্স, শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট, মদ, ইয়াবা, গাড়ীর পার্স, টায়ার, সিএনজিচালিত আটোরিকশার চাকা, মোবাইল হ্যান্ড সেট, চা-পাতা, মটরসাইকেল, বিস্কুট ও ভারতীয় শাড়ী।

এসব সীমান্ত দিয়ে নানা রকমের বাংলাদেশী পণ্য ভারতে পাচার হচ্ছে। বিজিবি ও পুলিশের কিছু সদস্যকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা উল্লেখিত পণ্যের চালান নিয়ে আসছে। সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তাদের চোরাচারানী বন্ধ হচ্ছে না। এসব চোরাচালানে বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্য অবাধে পাচার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নলজুরী, আলু বাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আসামপাড়া, ছাগল খাউরী, মিনাটিলা, রাবার বাগান, কাটালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, আসামপাড়া, ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম, কালিঞ্জীবাড়ী, জালিয়াখলা, বড়গাং নদীর উৎসমুখ, সারী নদীর মুখ, লাল মিয়ারটিলা, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, আফিফানগর, তুমইর, ইয়াং রাজা, বালিদাঁড়া, সিঙ্গারীর পাড় এলাকার অন্তত ১২০টি চোরাই পথ দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসা হচ্ছে।

জানাগেছে, বাংলাদেশ-ভারতের ত্রিভুজাকৃতির একটি সীমান্ত বাংলাদেশের দিকে ঢুকে পড়েছে। আর এই সীমান্ত দিয়েই প্রতিরাতে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ভারতে পাচার করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীরা জানান- প্রতিরাতেই ট্রাক ও পিকআপে করে বস্তা ভর্তি করে এসব পণ্য ভারতে পাচার করে দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সার, সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, পেয়াজ, রসুনসহ নানা পণ্য অবাধে পাচার হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এতবড় চোরাচালান হচ্ছে তা জনগণের মাঝে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশী পণ্য ভারতে পাচারের পাশাপাশি ভারত থেকেও অবাধে প্রবেশ করছে ফেনসিডিল, রেকোডেক্স, ইয়াবাসহ নেশাজাতীয় মাদক দ্রব্য। প্রতিদিন রাতে এভাবে দেশের পণ্য চোরাচালান হওয়ায় সীমান্তবর্তী মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। চোরাচালান বন্ধে সম্প্রতি বিডিআর সীমান্তবর্তী এলাকায় সবোর্চ্চ সর্তকাবস্থা জারী করে। কিন্তু তাতেও চোরাচালান বন্ধ হয়নি। সীমান্ত পথে এসব অবৈধ চোরাচালান বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে ওঠা জৈন্তাপুর সীমান্তে চোরাকারবারিদের কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত চোরাচালান আটক করলেও চোরাচালান থেকে ফিরছেনা চোরাকারবারিরা। উল্টো চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে ভারতীয় শাড়ি, কাপড় পাচার হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু চোরাচালান আটক করা হলেও রাঘব বোয়াল চোরাকারবারিদের কাউকে আটক করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।

বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, সীমান্তের আওতা ছাড়া ব্যাটালিয়ন কমান্ডার (সিও) লাইন নামে ও সোর্স চক্র চাঁদা আদায় করছে। এছাড়া সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতীয় খাসিয়ারা বিনা বাধায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং সিলেট শহরসহ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এমনকি রাজধানী ঢাকা শহরে গিয়েও তারা অবস্থান করছে। বিষয়টি সরকারী বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তদন্তেও উঠে এসেছে।

জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ ভারতীয় পণ্যসামগ্রী। কতিপয় প্রভাবশালী চোরাকারবারী বেন্ডিস করিম ও রফিক হাজী প্রকাশ লুদাই হাজী চক্রের নেতৃত্বে অবাধে প্রবেশ করছে এসকল পণ্য। জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশ করে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সয়লাব। প্রশাসনিক তৎপড়তার অভাবে এই উপজেলার চোরাকারবারী ও মদদ-দাতারা এখন জিরো থেকে কোটিপতি। এ থেকে বাদ নেই কতিপয় বিজিবি, পুলিশ ও লাইনম্যানরা। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তাবেদারির অভাবে দিনের পর দিন তাদের দৌড়াত্ব বেড়ে চলেছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিন রাতে উল্লেখিত কতিপয় ব্যক্তি বেন্ডিস করিম ও লুদাই হাজীকে লাখ, লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ পণ্য দেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। পণ্য সামগ্রীগুলো হল, বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, মাদক, শাড়ি, গরু, মহিষ, কিটের কার্টুন, ওষুধ-ইন্ঞ্জেকশন, সেনিটাইজার, মোবাইল ফোন, খেলার জুতা, সাপের বিষ, মোটরসাইকেল-টায়ার, কসমেটিকস ও স্বর্ণের বার।

এছাড়া সরকারের কোটি, কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কাচামালের চালানও প্রবেশ করছে অনায়াসে। এর নিরাপদ রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সিলেট-তামাবিল রোড, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর রোড, কানাইঘাট-রাজাগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ রোড, জকিগঞ্জ-সিলেট রোড ও কোম্পানীগঞ্জ-সালুটিকর রোড। সীমান্ত বিজিবির হাত ছুয়ে সিলেট জেলা পুলিশের নাকের ঢগা দিয়ে সদর এলাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে পড়ছে এসকল পণ্য। এতে করে সামাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এরকম কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।

স্থানীয়দের দাবি,এই মহামারি পরিস্থিতিতে জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাকারবারিদের সামলাতে না পারলে সিলেট বিভাগসহ গোটা দেশ আরও বেশি করোনা ঝুঁকিতে পড়বে। করোনা মহামারির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে রক্ষা করতে অবিলম্বে জৈন্তাপুরের চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

এ বিষেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা অধীনস্থ দুটি ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন ক্যাম্প ও কোম্পানির কমান্ডারদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। আমরাও বিভিন্ন ভাবে মালামাল আটক করছি।চোরাচালন বন্ধে বিজিবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন