দরোজায় কড়া নাড়ছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা নির্বাচন কমিশনের। আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে জুলাইয়ে নির্বাচন।
এ কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে সরব। চলছে গণসংযোগ ও মতবিনিময়। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটিয়েও চলছে প্রচারণা। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলের নবাগত কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) সংসদীয় আসনের এমপি মাহমুদ- উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগ থেকে দেড় ডজনের মতো নেতা এ আসনে প্রার্থী হতে মাঠে কাজ শুরু করেন। জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চান হাফ ডজন প্রার্থী। তারাও মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। ২০০৮ সাল থেকে তিনি দলের মনোনয়ন চাইছেন। এই অবস্থায় গত ১১ই মার্চ আলহাজ মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে হাবিবুর রহমান হাবিব ফের সরব হয়েছেন। তার উদ্যোগে গত ২২শে মে দক্ষিণ সুরমায় করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করেন।
এতে প্রধান অতিথি করা হয় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমানকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এডভোকেট লুৎফুর রহমান হাবিবুর রহমান হাবিবকে সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন বলে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা দাবি করেন। এ নিয়ে এডভোকেট লুৎফুর রহমানের বক্তব্য সংবলিত একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। এতে এডভোকেট লুৎফুর রহমান হাবিবুর রহমান হাবিবকে সমর্থন করেই বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে তিনি দলের প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন- ‘আমাদের যারা নেতা এবং কর্মী আছেন তারা ইচ্ছা পোষণ করছেন হাবিবুর রহমান হাবিব সব সময় তাদের পাশে থাকেন, কাজ করেন ও করেও আসছেন তাকে নমিনেশন দেয়ার জন্য। আমিও তাদের সঙ্গে একমত। আমি নেত্রীকে অনুরোধ করবো- হাবিবুর রহমান হাবিবকে আপনারা নমিনেশন দেন।
আরো অনেক প্রার্থী রয়েছে তারা অন্যান্য পদে বিভিন্ন জায়গায় স্থান দেবেন। কিন্তু পার্লামেন্টে দয়া করে হাবিবুর রহমান হাবিবকে নমিনেশন দেন। এলাকার মানুষ তাকে প্রার্থী হিসেবে চাইছে।’ তার এই বক্তব্য নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে তোলপাড় শুরু হয়। কেউ কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়েন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রকাশ্যে কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দিয়ে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন বলে প্রশ্ন তোলেন।
তবে পরবর্তীতে সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানিয়েছেন, সিলেট-৩ আসনে দলীয় সভানেত্রী ও পার্লামেন্টারি বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। নৌকা যে পাবে সেই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ ব্যাপারে সিলেট-৩ আসনের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি নিজাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন-‘এডভোকেট লুৎফুর রহমান শুধু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নন, জেলার একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদও বটে।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে উনার কথা বলা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ উনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। কিন্তু এই ঘোষণার পর অনেকেই উনার প্রতি বিরাগভাজন হতে পারেন। যা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সবার অবগতির জন্য আমি বলতে চাই- এটা দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়, সভাপতির ব্যক্তিগত বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলীয় মনোনয়ন কাকে দেয়া হবে- এটার ব্যাপারে কেন্দ্র ও জেলা কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেয়নি। এটা সভাপতির ব্যক্তিগত মতামত।
যারাই প্রার্থী সবার উচিত সভাপতিকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে না ফেলা।’? সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন- প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান, সাংবাদিক ও সাবেক ভিপি শাহ মুজিবুর রহমান জকন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুর রকিব মন্টু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা স্যার এনামুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহিদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল বাছিত টুটুল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম সহ কয়েকজন। এদিকে গত ২৫শে মে সন্ধ্যায় দলের একাংশের নেতাকর্মীদের এক বৈঠকে সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবুলকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিলো- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এডভোকেট মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শহিদ লস্কর বশীরের পরিচালনায় বৈঠকে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ওই বৈঠকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ, মো. নজরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালিক খান, এডভোকেট মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী সহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছে কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক,কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল, তোফায়েল আহমদ, জেলার সদস্য সচিব উসমান আলী ও লন্ডন প্রবাসী আতাউর রহমান। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কয়েকজন নেতা বৈঠক করে নজরুল ইসলাম বাবুলের নাম ঘোষণা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় দেখা দেয়। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন নেতাকর্মীরা।
প্রার্থিতা ঘোষণা করে ওই সব কেন্দ্রীয় নেতারা নজরুল ইসলাম বাবুলের পক্ষে গণসংযোগে নামেন। তবে- জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা মো.আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড।খবর মানবজমিন,
অন্য কেউ কোনো অবস্থাতেই কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন না। যেটি হয়েছে সেটি বিভ্রান্তিমূলক। তবে নবাগত কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুলের পক্ষে সিলেটে অবস্থানরত প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা ঐক্যবদ্ধ। বিষয়টি তারা দলের হাইকমান্ডকে জানাবেন বলেও জানান।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন