বিশেষ প্রতিবেদনঃঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তে সরব চোরাকারবারিরা। দিন গড়িয়ে রাত হলেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) যৌথ টহল এড়িয়ে একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে গরু, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইন, অস্ত্র, মোটরবাইকসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান। স্থানীয় প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে রাতের বেলায় চোরাকারবারিরা এসব চোরাচালান দেশে আনলেও বর্তমানে বাংলাদেশী পণ্যের বিনিময়ে দিনের বেলাও দেশে ঢুকছে বড় বড় চোরাচালান। এদিকে দিনে দুপুরে এই দুই দেশী পণ্যের আদান-প্রদান হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সীমান্ত এলাকার একাধিক লোকজন জানান, ভারতের অঙ্গ রাজ্য ও আশপাশের এলাকায় রসুনের দাম তুলনামূলক বেশি। তাই চীন থেকে বাংলাদেশে আনা রসুন, মটর শুটি, মসুরি ডাল, চানা ডাল, ডিজেল, সার, সিলিন্ডার গ্যাস, প্লাস্টিক, স্বর্ণের বার ও বাংলাদেশী মুদ্রা চোরাইপথে পাচার হচ্ছে অধিক মুনাফার লোভে। দিন-দুপুরে ট্রাক ভরে রসুন পৌঁছচ্ছে চোরাকারবারিদের আস্তানায়। সেখান থেকে পাচার করা হচ্ছে ভারতে। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্তে দিন-কিংবা রাতে সমান তালে এসব পণ্য সামগ্রী আদান-প্রদান হচ্ছে।
তারা জানান, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট, সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি, সেনাটিলা, উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র, তামাবিল, নলজুরী এবং জৈন্তাপুর উপজেলার খাসি নদী, আলু বাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, মিনাটিলা, ছাগল খাউরী নদী, কাঠাঁলবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, কেন্দ্রীবিল, ডিবির হাওর, ডিবির হাওর (আসামপাড়া), ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ি, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গুয়াবাড়ি, বাইরাখেল, হর্নি, কালিঞ্জী, ময়না, জালিয়াখলা, লালাখাল, লালাখাল গ্র্যান্ড, জঙ্গিবিল, বাঘছড়া, তুমইর, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা, সিঙ্গারীরপাড় দিয়ে বানের পানির মত বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে রসুন, মটর শুটি, মসুরি ডাল, চানা ডাল, ডিজেল, সার, সিলিন্ডার গ্যাস, প্লাস্টিক, স্বর্ণের বার ও বাংলাদেশী মুদ্রা।
বিনিময়ে বাংলাদেশে আসছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল, নিম্নমানের চা-পাতা, কসমেটিকস, সুপারি, হরলিক্স, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট, নাছির বিড়ি ও ভারতীয় গরু। এদিকে সন্ধ্যা হতে না হতেই জৈন্তাপুর বাজার হতে বড় বড় ট্রাক যোগে নিয়ে আসা খাদ্যদ্রব্য মটর শুটি, মসুরি ডাল, চানা ডাল, বাংলাদেশের আমদানি কৃত রসুন ছোট ছোট পিকআপ, ডিআই ট্রাক, ব্যাটারি চালিত টমটম যোগে সীমান্তের উল্লেখিত পয়েন্টে সমূহে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি উপজেলার সচেতন মহল মনে করছে সীমান্ত প্রশাসনের নীরবতার কারণে চোরাকারবারিরা উৎফুল্ল আনন্দে প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে বাংলাদেশী পণ্য সামগ্রী ভারতে পাচার করছে।
বিশেষ করে জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ ভারতীয় পণ্যসামগ্রী। কতিপয় প্রভাবশালী চোরাকারবারী বেন্ডিস করিম চক্রের নেতৃত্বে অবাধে প্রবেশ করছে এসকল পণ্য। জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশ করে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সয়লাব। প্রশাসনিক তৎপড়তার অভাবে এই উপজেলার চোরাকারবারী ও মদদ-দাতারা এখন জিরো থেকে কোটিপতি। এ থেকে বাদ নেই কতিপয় বিজিবি, পুলিশ ও লাইনম্যানরা। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তাবেদারির অভাবে দিনের পর দিন তাদের দৌড়াত্ব বেড়ে চলেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিন রাতে উল্লেখিত কতিপয় ব্যক্তি বেন্ডিস করিমকে লাখ, লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ পণ্য দেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। পণ্য সামগ্রীগুলো হল, বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, মাদক, শাড়ি, গরু, মহিষ, কিটের কার্টুন, ওষুধ-ইন্ঞ্জেকশন, সেনিটাইজার, মোবাইল ফোন, খেলার জুতা, সাপের বিষ, মোটরসাইকেল-টায়ার, কসমেটিকস ও স্বর্ণের বার।
এছাড়া সরকারের কোটি, কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কাচামালের চালানও প্রবেশ করছে অনায়াসে। এর নিরাপদ রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সিলেট-তামাবিল রোড, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর রোড, কানাইঘাট-রাজাগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ রোড, জকিগঞ্জ-সিলেট রোড ও কোম্পানীগঞ্জ-সালুটিকর রোড। সীমান্ত বিজিবির হাত ছুয়ে সিলেট জেলা পুলিশের নাকের ঢগা দিয়ে সদর এলাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে পড়ছে এসকল পণ্য। এতে করে সামাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এরকম কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন মহলের বেশ কিছু ব্যাক্তিবর্গ জানিয়েছেন, কতিপয় অস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাকচালক বলেন, পেটের দায়ে আমরা চোরাইপন্য সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়ে নিয়ে আসি, অনেক সময় কাটুন কাটুন ভারতীয় পণ্য সিগারেট, বিড়ি, চা-পাতা, সুপারি, কসমেটিকসের চালান নিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসি। এসব পণ্য সামগ্রী আদান-প্রদান করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়তে হয় নি।
তারা আরও বলেন সীমান্ত প্রশাসনের লাইনম্যানের সাথে পণ্যের মালিক গণ চুক্তির মাধ্যমে এসব পণ্য আদান প্রদান করেন। মাঝে মধ্যে কেউ লাইন ম্যানেজ না করলে সেই মাল আটকা পড়ে বলে শুনেছি আমরা কখনও আটকা পড়ি নি। মাদক সামগ্রীর বিষয় জানতে চাইলে তারা বলে কাটুনের মধ্যে কি থাকে আমরা কখন দেখি নাই, কারণ সময় খুব কম থাকে, দ্রুত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হয়। তবে এখনকার সময়ে গরুর চালান বেশি প্রবেশ করে বলে তারা জানান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাদের দেখেন অবৈধ পণ্য নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু প্রশাসন আটক করে না। যদি আটক করে তাহলে পন্যের মালিকের নাম বললে প্রশাসন ছেড়ে দেয়।
এ বিষেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা অধীনস্থ দুটি ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন ক্যাম্প ও কোম্পানির কমান্ডারদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। আমরাও বিভিন্ন ভাবে মালামাল আটক করছি।
চোরাচালন বন্ধে বিজিবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন