• ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয়ে অল্প দিনেই “আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ”- ক্যাসিনো সম্রাট মাজেদ খান

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মে ৩১, ২০২১
শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয়ে অল্প দিনেই “আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ”- ক্যাসিনো সম্রাট মাজেদ খান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর উত্তরার নাম করা দখলবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের গডফাদার ও ক্যাসিনো সম্রাট মাজেদ খান । যার নামের আগে ও পরে রয়েছে একাধিক উপাধি । তবে যাই হোক তিনি এখন উত্তরার নামকরা একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ।

একসময় তিনি যদিও ছোট্ট একটি মুদি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং বি এন পির সহযোগী সংগঠন তরুণ দলের সাথে যুক্ত থেকে রাজনীতিও করতেন । গত কয়েক বছর আগে তিনি হঠাৎ করেই ঘোষণা দেন নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি হিসেবে । যদিও জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি অজানা । সূত্র বলছে, মাজেদ খান শ্রমিক লীগের স্বঘোষিত নেতা ।
আর এই শ্রমিক লীগের পরিচয়টা ব্যবহার করে অল্প দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে বনে গেছেন বিত্ত বৈভবের মালিক । বৃহত্তর উত্তরায় তার রয়েছে একাধিক আলিসান বাড়ি, বহুতল ভবন, মার্কেট সহ অঢেল টাকা পয়সা । আর এসব তিনি কামিয়েছেন বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় ।

যেমন চাঁদাবাজি, দখলবাজি, প্রতারণা, তার মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলে নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা, ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া পরিচালনা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় ।

তাছাড়া মন্ত্রী ও এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দালালী করেও কামিয়ে নিচ্ছেন অবৈধ অর্থ । আর এই ভাবে তিনি অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমেই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যান বলে এলাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ।এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্রমিক লীগের কথিত নেতা মাজেদ খানের আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়ার পিছনের রহস্য সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল । তিনি সব সময় নিজেকে সরকার দলীয় একজন হোমড়া- চোমড়া হিসেবে পরিচয় দেন । দলে পদ পদবী না থাকলেও নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি হিসেবে দাবি করেন ।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, উত্তরা আজমপুরে অবস্থিত রাজউক কর্মচারি সমিতি কমার্শিয়াল কম্পেলেক্স মার্কেটের স্বঘোষিত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাজেদ খানের অবৈধ কর্মকান্ড ও চাঁদাবাজীর প্রতিবাদ করে আসছেন মার্কেটের সিংহভাগ ব্যবসায়ী ।

মাজেদ খানের অত্যাচার,নির্যাতন. চাঁদাবাজী ও হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মাজেদ খানের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ৮/৪/ ২০২১ইং তারিখে একটি সাধারন ডায়েরী করেন, ডয়েরী নং ৫০৮ । মার্কেটটির কম্পিউটার ফ্লোরের ব্যবসায়ী সুমন বিশ্বাসের কাছ থেকে জোড় পূর্বক ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে একটি সাধারন ডায়েরী করেন,

ডায়েরী নং ৫০৪, তারিখ ৮/৪/ ২০২১ । এছাড়াও মিন্নত আলী নামে আরেক ব্যবসায়ী মাজেদ খানের নামে জোড় পূর্বক চাঁদা দাবি ও আদায়েরও একটি জিডি করেন । প্রতিটি জিডিই তদন্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন পুলিশ কর্মকর্তাগন । ইতিপূর্বে মাজেদ খানের চাঁদা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী উত্তরা পশ্চিম থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করেন ।

তবে আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগের সুফল পায়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা । অন্যদিকে গত ২১/১১/ ২০১৯ইং তারিখে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে ডিবির হাতে গ্রেফতার দুই জনসহ মাজেদ খাঁনকে প্রধান আসামী করে ডিবি পুলিশের সহকারী পরিদর্শক নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করেন, মামলা নং —৩৭ । ১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগের শাসন আমলে তৎকালীন বৃহত্তর উত্তরা থানায়, ১টি মামলাও রয়েছে মাজেদ খাঁনের বিরুদ্ধে, মামলা নং —২৫(১১)৯৯ । ২০০৩ সালে বিএনপির শাসনামলে বিমান বন্দর থানায় ১টি মামলা দায়ের হয়, মামলা নং —৩৮ (১)০৩ এবং তৎকালীন বৃহত্তর উত্তরা থানায় আরো ২টি মামলা দায়ের হয়, মামলা নং ৪৬(৫)০২ এবং ০১(০৭)০৩ ।

এছাড়াও মাজেদ খাঁনের বিরুদ্ধে হত্যা—খুন, ধর্ষনসহ ডজন খানেক মামলা ও অসংখ্য জিডি এবং অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন থানায় । মাজেদ খাঁন ও তার ছেলে নাজিমের চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ এখন উত্তরার ব্যবসায়ীরা।

রাজউক কর্মচারি সমিতি কর্তৃক নির্মিত রাজউক কমার্শিয়াল কম্পেলেক্স মার্কেটে জোড়পূর্বক সভাপতির পদ দখল করে ব্যবসায়ীদেরকে হুমকি দিয়ে, বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ মাজেদ খাঁন ও তার ছেলে নাজিমের বিরুদ্ধে । এছাড়াও মার্কেটের যে কোন দোকান ক্রয় বিক্রয় হলে মাজেদ খাঁনকে ৫০ ভাগ অর্থ দেওয়া বাধ্যতামূলক ।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ দিন গত রাতে মাজেদ খানের মালিকানাধীন উত্তরার ১০নং সেক্টর রানাভোলা এভিনিউ সড়কের ২২১ নং হাউসের, ২৩/২৪ নং রোডসংলগ্ন “রিভার ওয়েভ” হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে র্যা ব অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা,বিপুল পরিমান মাদক এবং ক্যাসিনো সরঞ্জামসহ ৩১ নারী-পুরুষকে আটক করে।

একই কায়দায় গত শনিবার ( ২৯শে মে) দিন গত রাতে ঐ হোটেল থেকে স্থানীয় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েক জন নারী- পুরুষকে আটক করে থানায় নিয়ে যান বলে জানান স্থানীয়রা ।

তাই উত্তরা বাসী এই “ক্যাসিনো সম্রাট” মাজেদ খানের গ্রাস থেকে মুক্তি চায় । উপরোক্ত বিষয় জানতে মাজেদ খানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি । যার কারনে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন