ক্রাইম প্রতিবেদকঃঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইনের পর অনেকেই ভাব ছিলেন নুরুলের টোকেন বিক্রি বন্ধ হতে পারে। সম্প্রতি একটি অনুষ্টানে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন নম্বরবিহীন সিএনজি বন্ধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু টোকেন নুরুল এসপির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযানে দু’চারটি নম্বরবিহীন অটোরিক্সা আটক হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানগুলো থেমে যায়! ফলে এই তিন সড়কে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলাচলে বাধা থাকছে না কোথাও।
সরেজমিন অনুসন্ধান নামে টিম। উঠে আসে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার তিন সড়কের টোকেন বাণিজ্যের প্রদান নুরুলসহ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম।
জানা গেছে, এই তিন সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী। আর অবৈধ গাড়িগুলো চলছে বিশেষ টোকেন’র মাধ্যমে। টোকেন বাণিজ্য করে মাসে লাখ লাখ ও বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে নুরুল সিন্ডিকেট। অবৈধ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সাহস যেন কারই নেই!
টোকেন সিন্ডিকেট প্রদানের নাম নুরুল হক উরফে টোকেন নুরুল। এই প্রধানের ইশারায় এই তিন সড়কে দীর্ঘদিন দিন থেকে চলছে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা। পরিচিতি শুধু টোকেন।
এদিকে সিলেটে অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিকশা টোকেন বাণিজ্যের মূলহোতা নুরুল হক উরফে টোকেন নুরুলের বিরুদ্ধে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার বরাবরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সংবাদকর্মী মোঃ রায়হান হোসেন (মান্না)।
‘কঠোর লকডাউন’র মধ্যে বন্ধ হয়নি নুরুল হক উরফে টোকেন নুরুলের বাণিজ্য। সরকারি সকল নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিকশা নুরুলের বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে।
এই টোকেন নুরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো। তাছাড়া এনিয়ে অনুসন্ধানমুলক সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে টোকেন নুরুলের হুমকির শিকার হন সাংবাদকর্মী ও টোকন নুরুলের টোকেনে চালিত ৪ টি নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ি আটক করায় জৈন্তাপুর মডেল থানার ভিতরে নুরুলে হুমকির শিকার হন এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।
গত রোজ শনিবার (১ মে ২০২১ ) ইং তারিখে সাংবাদকর্মী মোঃ রায়হান হোসেন (মান্না) বাদী হয়ে সিলেট তামাবিল মহাসড়কে অবৈধ নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ীর টোকেন ব্যাবসায়ীর মূলহুতা নুরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলার পুলিশ সুপার বরাবরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, কিছু শ্রেণীর অসাধু মানুষ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে মিলে প্রায় ৩,০০০ (তিন হাজার) নম্বরবিহীন সিএনজি পুলিশ টোকেনর নামে একটি বিশেষ টোকনে দেদারছে চলাচল করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই তামাবিল মহাসড়কের টোকেন বাণিজ্যের মূলহুতা জৈন্তাপুর উপজেলার ৫ নং ফতেপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও বালিপাড়া গ্রামের আব্দুল মনাফ উরফে গাছ মনাফের ছেলে টোকেন নুরুল উরফে ( নুরুল হক মেম্বার)।
চলমান কঠোর লগডাউনে গত (১৯ এপ্রিল) বটেশ্বর সদর শেষ সীমান্তে সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সকল ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এসএমপির ট্রাফিক পুলিশ। তখন তামাবিল মহাসড়কের টোকন বাণিজ্যের মূলহুতা টোকেন নুরলের টোকনে চালিত কয়েকটি নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ি আটক করা হয়। অভিযান চলাকালে তিন জন সাংবাদকর্মীদের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের সাথে আলাপ করেন। ওই সময় আটক নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে বর্ণিত স্থানে উপস্থিত হন টোকেন নূরুল হক পরে তিনি সাংবাদকর্মীদের কর্তব্য কাজে বাঁধা প্রধান করেন। এমনকি ডিউটিরত পুলিশ সদস্য ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে সাংবাদকর্মী মোঃ রায়হান হোসেন (মান্না) কে মারার জন্য ধাওয়া করেন এর পর পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তিনি নুরুলের হাত থেকে রক্ষা পান। এনিয়ে অনুসন্ধানমুলক সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে টোকেন নুরুলের হুমকির শিকার হন সাংবাদকর্মী মোঃ রায়হান হোসেন মান্না। এমনকি মিথ্যা মামলা ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয় নুরুল। এমন হুমকিতে সাংবাদিক নিজের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২০ এপ্রিল শাহপরাণ (রহঃ) থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। যাহার ডায়রী নং-৯৪৫।
তাছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন নেতাদের দিয়ে সাংবাদকর্মীকে দায়েরকৃত তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রী প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন।
এজাহার সুত্রে আরো জানা গেছে, বিগত দিনে এই টোকেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্থানীয় দৈনিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ করেছেন জনৈক সাংবাদকর্মী। সে সময়ও এরকম নিউজ প্রকাশের জের-ধরে ওই সাংবাদকর্মীকে বিগত দিনেও এরকম প্রাণে মারার হুমকি প্রধান করেন। পরে জনৈক সাংবাদকর্মী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়রী করেন।
এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের (৮ জানুয়ারি) জৈন্তাপুর থানাধীন একালায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট অভিযান পরিচালনা করে টোকন নুরুল হকের টোকনে চালিত ৪ টি নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ি আটক করে জৈন্তাপুর মডেল থানায় নিয়ে যান। কিছু সময় পর পর টোকেন নুরুল একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে থানায় গিয়ে থানার ভিতরেই ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট কে মারার জন্য ধাওয়া করেন এবং এক পর্যায়ে থাকে প্রাণে মারার হুমকি প্রধান করেন। পরে এই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সাহেব নিজের নিরাপত্তা চেয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন এবং টোকেন নুরুলসহ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেট জেলার পুলিশ সুপার বরাবরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, টোকেন নুরুলের বাবা জীবিকা নির্বাহ করতেন সিলেটের পুরাতন ব্রিজের নিচ থেকে শিকর মাটি কিনে এনে তার নিজ গ্রাম ও আশ-পাশের গ্রামের বাড়িতে হেটে প্রতিদিন শিকর মাটি বিক্রি করতেন। আর তার পুত্র এই সেই নুরুল (টোকন নুরুল) আজ থেকে ৭ বছর আগে হরিপুরে পলিথিন বেগ বিক্রি করতো স্থানীয় মাছ বাজারে। এক সময় হেলপার হয়ে মটর ডিপার্টমেন্টে যুক্ত হয় নুরুল। পরে হয়ে ওঠে মটর চালক। এরই এক পর্যায়ে নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়িতে অবৈধ টোকেন বিক্রি করে বনে গেছে রাতারাতি কোটিপতি। আর সেই কালো টাকার জোরে সে হাতিয়ে নিয়েছে ৫ নং ফতেপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদ। এতে বুঝা গেল টাকা থাকলেই এখন দলের পদ-পদবী পাওয়া যায় যোগ্যতার প্রয়োজন নেই?
অভিযোগ রয়েছে অবৈধ এই নম্বরবিহীন সিএনজিতে টোকন বাণিজ্যের টাকা দিয়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সড়কে চলছে অবৈধ অটোরিকশা। শুধু তাই নয়, টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় কিছু হলুদ সাংবাদিকদের। আর নুরুল নিজেকে পরিচয় দেন শ্রমিক নেতা হিসেবে।
সূত্রে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে বসে বসে তিন সড়কের সবগুলো সিএনজি অটোরিকশায় টোকেন লাগিয়ে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আর প্রতি বছর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার প্রশাসনের গাফিলতির কারণে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ যান চলাচল। বন্ধ হচ্ছে না সড়ক দূঘর্টনা ও লাশের মিছিল। শ্রমিক নেতারা টোকেনের টাকার একটি বড় অংশ পুলিশের পকেটে যাওয়ার দাবি করলেও পুলিশ এসব অস্বীকার করছে।
সিএনজি মালিকদের সুত্রে জানা গেছে, অবৈধ যানবাহন রোধে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্তা-ব্যক্তি, চাঁদাবাজ ও টুকেনবাজরা এ রোডে অবৈধ যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতে টোকেন চালু করেছে সিএনজি চালক শ্রমিক নামদারি জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের হরিপুর এলাকাধীন বালিপাড়া গ্রামের চাঁদাবাজ নূরুল হক (মেম্বার)। বিনিময়ে প্রতি মাসে অবৈধ যানবাহন থেকে কামাই করছেন লাখ-লাখ টাকা এবং তার সাথে এক শ্রেণির পুলিশ-সাংবাদিকের পকেটও ভারি হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকার, চালক ও মালিকরা।
শ্রমিক ইউনিয়নের সুত্র মতে, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জাফলংসহ ৩ উপজেলায় প্রায় সাড়ে দুই থেকে ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনহীন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে মহাসড়কে সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরপর থেকে অবৈধ টোকেন বাণিজ্যে গড়ে ওঠে টোকেন নুরুলের সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ হচ্ছে না নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা। তার খুঁটির জোড় কোথায়? জানতে চায় বৈধ শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সর্বশেষে জনৈক সাংবাদকর্মী টোকন নুরুলের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সিলেট তামাবিল মহাসড়কে অবৈধ টোকেনে চালিত নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন