• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জৈন্তাপুর সীমান্তে চোরাকারবারীদের লাইনম্যান বেন্ডিস করিম ,রুবেল বেসামাল, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মে ২৩, ২০২১
জৈন্তাপুর সীমান্তে চোরাকারবারীদের লাইনম্যান বেন্ডিস করিম ,রুবেল বেসামাল, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

বিশেষ প্রতিবেদকঃঃ ভারতে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। উচ্চমাত্রায় সংক্রমণ থাকায় ভারতের সাথে সীমান্ত পথ বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সকল প্রকার গমনাগমনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। তবে উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চোরাচালানী চলছে দ্বিগুণ হারে। ঈদকে সামনে রেখে চোরাচালানী তৎপরতা পূর্বের যেকোনো সময়ের থেকে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অবাধে এই চোরাচালানীর ঘটনায় সিলেটের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে ঝুঁকি বাড়ছে করোনার।

জানা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাকারবারীরা এখন বেসামাল। কোনো অবস্থাতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অপ্রতিরোধ্যভাবে এসব চোরাকারবারীরা ভারতীয় পণ্যের চোরাচালানের সাথে আমদানী করছে ভয়াবহ সংক্রমণব্যধি করোনা। আর তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে সীমান্তরক্ষীদের বিশেষ কিছু সদস্য। অবশ্য অভিযোগ আছে জৈন্তাপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধেও।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও তা বর্তমানে কমে এসেছে। তবে পার্শ্ববর্তী ভারতে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে ভাইরাসটি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন যে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে দেশের অবস্থা বিপর্যস্ত হবে। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। তবে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।

ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব শংকিত, তখন বেসামাল সিলেটের এই কারবারিরা। জৈন্তা বার্তার অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে চোরাচালানে সংশ্লিষ্ট একাধিক নাম। এইসব কাজে সহযোগিতার জন্য বিজিবি ও চোরাকারবারিদের রয়েছে নিজস্ব সোর্স। অনুসন্ধানে উঠে আসা সোর্সরা হলেন, উপজেলার হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিক আহমদ উরফে লোদাই হাজী, হেলাল আহমদ, আব্দুর রশিদ, মো. আলী, মো. আব্দুল্লাহ, মো. ইব্রাহিম আলী, দরবস্ত মানিকপাড়া গ্রামের বিলাল আহমদ, লালাখাল গ্রামের সেলিম আহমদ, লালাখাল কালিঞ্জিবাড়ী গ্রামের রহিম উদ্দিন। রহিম উদ্দিন ও সেলিম আহমদ বিজিবি- ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও পুলিশের লাইনম্যান বা সোর্স হিসাবে পরিচিত। অপরদিকে জৈন্তাপুর সীমান্তে এককভাবে পুলিশ, বিজিবি ও বিএসএফ’র লাইনম্যান বা সোর্স হিসাবে পরিচিত আব্দুল করিম উরফে বেন্ডিজ করিম, কেন্দ্রি মিজান, আহমদ রুবেল, আলুবাগান গ্রামের কবিরাজ ফারুক, ৪নং বাংলাবাজারের জামাল আহমদ প্রমুখ।

সোর্স থাকায় নির্বেঘ্নে চলছে জৈন্তাপুরে চোরাচালানী। দিনে এবং রাতে প্রকাশ্যে ভারত থেকে দেশে অবৈধ পণ্য প্রবেশ করলেও সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবির কর্তাব্যক্তিরা থাকেন নীরব। উপরন্তু নিরাপদে ভারতীয় পণ্য দেশে দ্রুত খালাস করতে কাজ করেন তারা। এমন অভিযোগ-সীমান্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর। খবর জৈন্তাবার্তা , ফলে উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন পথে ভারত থেকে তারা অবাধে নিয়ে আসছে গরু-মহিষ, কসমেটিক্স, শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট, মদ, ইয়াবা, গাড়ির পার্টস, টায়ার, সিএনজিচালিত আটোরিকশার চাকা, মোবাইল হ্যান্ড সেট, চা-পাতা, মটরসাইকেল, বিস্কুট ও ভারতীয় শাড়ি।

সীমান্ত ঘুরে জানা গেছে, বিজিবি ও পুলিশের কিছু সদস্যকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা উল্লেখিত পণ্যের চালান নিয়ে আসছে। সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তাদের বাণিজ্য চলছে খুব স্বাভাবিকভাবে। নলজুরী, আলু বাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আসামপাড়া, ছাগল খাউরী, মিনাটিলা, রাবার বাগান, কাটালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, আসামপাড়া, ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম, কালিঞ্জীবাড়ী, জালিয়াখলা, বড়গাং নদীর উৎসমুখ, সারী নদীর মুখ, লাল মিয়ারটিলা, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, আফিফানগর, তুমইর, ইয়াং রাজা, বালিদাঁড়া, সিঙ্গারীর পাড় এলাকার অন্তত ১২০টি পথ দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে আমদানীকৃত মটরশুটি, ডাল এবং স্বর্ণের বার।

এদিকে চোরাকারবার নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিলে তথ্য প্রদানকারীদের বাড়িতে এবং নানাভাবে হয়রানিসহ হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। এ কারণে তারা মুখ খুলতে চান না।

বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, সীমান্তের আওতা ছাড়া ব্যাটালিয়ন কমান্ডর (সিও) লাইননামে ও সোর্স চক্র চাঁদা আদায় করছে। এছাড়া সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতীয় খাসিয়ারা বিনা বাধায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং সিলেট শহরসহ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এমনকি রাজধানী ঢাকা শহরে তারা অবস্থান করছে। বিষয়টি সরকারি-বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তদন্তেও উঠে এসেছে।

স্থানীয়দের দাবি, এই মহামারি পরিস্থিতিতে জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাকারবারিদের সামলাতে না পারলে সিলেট বিভাগসহ গোটা দেশ আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। করোনা মহামারির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে সুরক্ষা দিতে অবিলম্বে জৈন্তাপুরের চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জরুরী।

এ বিষয়ে জানতে ১৯ বিজবির লালাখাল বিওপি কমান্ডারের নম্বরে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে ‘পরে কথা বলবেন’ বলে ফোন কেটে দেন। পরে আরও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, আমি এই স্টেশনে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকে অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী আন্তরিক না হলে চোরাচালান রোধ করা কঠিন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন