• ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জামায়াত-শিবিরকে রক্ষায় তৎপর বহুরূপি আহাদ !

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মে ২১, ২০২১
জামায়াত-শিবিরকে রক্ষায় তৎপর বহুরূপি আহাদ !

স্টাফ রিপোর্টারঃঃ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অসাধারণ ক্ষমতা তার। কখনো বিএনপি, কখনো জামায়াত আবার কখনো সরকার দলের নেতাকর্মীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পথচলা দীর্ঘদিনের। যখন যাকে প্রয়োজন, তখন তাকেই ঢাল করে নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষা করে চলছেন গোলাপগঞ্জের সাংবাদিক নামধারী আবদুল আহাদ।

সময়ের প্রয়োজনে খোলস পাল্টাতে পিতামাতার আকিকা করা নাম আবদুন নুর পাল্টে ভাতিজার নামধারণ করা আহাদ মূলত স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবিরের মূল এজেন্ট। তার কাজই হলো বিভিন্ন কৌশলে জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।

আদর্শিক এ দলের ক্যাডারদের রক্ষা করতে ঐতিহ্যবাহী গোলাপগঞ্জে নিজেই একটি প্রেসক্লাব গঠন করে আজীবন সভাপতি পরিচয় ধরে রেখেছেন। মূলত থানায় দালালি করাই তার পেশা।

পাশাপাশি জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় প্রভাবশালীদের নাম বাদ দেওয়া ও পুলিশের গতিবিধি ও অভিযানের আগাম খবর পৌঁছে গ্রেফতার এড়াতে সহায়তা করা। প্রায় সময়ই জামায়াত শিবিরের নেতাদের সাথে আহাদের গোপন বৈঠকের খবর শোনা যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছের মানুষ আহাদ। তিনি সব সময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন।

একসময় তিনি ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অতি আস্থাভাজন। সময়ের প্রেক্ষাপটে এখন নাহিদ বিরোধী বলয়ে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পারদর্শী নুর ওরফে আহাদ নিজেকে ভয়ঙ্কর হিসেবে জাহির করতে পছন্দ করে। তার কর্মকান্ডে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ অর্থকড়ি হারিয়ে কিংবা জেল খেটেও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় মুখ খুলতে ভয় পান।

তার প্রতারণার জালে জড়িয়ে অনেকে এলাকা ছাড়াও হয়েছেন। বেপরোয়া আহাদের রোষানলে পড়ে গোলাপগঞ্জের একাধিক সাংবাদিককে কারাবরণও করতে হয়েছে। আসামি হয়েছেন বিভিন্ন মামলায়।
এদিকে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জের সুরমা নদীর দুই পাড়ের তীরবর্তী এলাকায় আতংকের নাম আবদুন নুর ওরফে নুর মিয়া ওরফে আব্দুল আহাদ। সুরমা নদীর তীর তার ইশারা ছাড়া এক চুল নড়ে না। নদীর পার অবৈধভাবে দখল করে ক্রাশার মেশিন চালানো, পাথর স্টক, বালু স্টক তার নিয়ন্ত্রণে। সুরমা নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ফসলী জমির মাটি কাটা, পরিবেশের ক্ষতি করে পাহাড়-টিলার মাটি কাটা তার ইশারায় চলে। এসব অবৈধ কাজের জন্য তার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে সে মাটিকাটা ও পাড়ের দখল নিয়ে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা তার অবৈধ ইনকাম। এমনকি সুরমা নদী থেকে জেলেরা মাছ ধরতে হলেও লাগে আহাদের বিশেষ পাসকার্ড।

প্রতি বছর সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীর ভেঙ্গে কয়েকশত পরিবার হয়েছে ভূমিহীন। আহাদের ভয়ে কেউ টু শব্দ উচ্চারণ করতে পারেনি। মাঝেমধ্যে নদীর তীর কেটে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে এলাকায় মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন পালিত হলেও দালাল উপাধিতে ভূষিত আহাদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব আন্দোলন মাথাচাড়া দেওয়ার আগেই করে ফেলে বিনষ্ট। অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে এলাকায় হয়েছে একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নদী তীরবর্তী লোকজন আহাদের ভয়ে সদা থাকে তটস্থ।

স্থানীয়রা জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌঘরী একাডুমা গ্রামের মরহুম আব্দুর রহিমের পুত্র আব্দুন নূর ওরফে আব্দুল আহাদ। আব্দুন নূর ওরফে আব্দুল আহাদের পিতা ছিলেন পেশায় একজন দর্জি। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফুটপাতে বসে কাপড় সেলাই করতেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানের নাম রাখেন আব্দুন নূর। সেই আব্দুন নূর এখন আব্দুল আহাদ নামেই স্থানীয় মামলাবাজ, প্রতারক, থানার দালাল, সন্ত্রাসী চক্র, হলুদ সাংবাদিক ও অসহায় নিরীহ মানুষের কাছে আতংক হিসেবেই পরিচিত। এক দরিদ্র দর্জি পরিবারের সন্তান হয়ে টার্গেট করে করে উপজেলার লোভনীয় ও লাভজনক পদে নিজেকে আসীন করে নানা কৌশলে। নামে সাংবাদিক হলেও সাধারণ মানুষ থানার দালাল হিসেবেই তাকে বেশি মর্যাদা দিয়ে থাকেন।

আবদুন নুর ওরফে আব্দুল আহাদ স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াত-শিবিরের একজন সক্রিয় কর্র্মী হলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে রয়েছে গভীর সখ্যতা। এছাড়া সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি, গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের একাংশের আজীবন সভাপতি, গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ লাভজনক সব পদ ধরে রেখেছেন তিনি। আর এ সকল পদের দোহাই দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে থানায় দালালি, মামলায় তদবির, চার্জশিটে নাম ঢুকানো কিংবা চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া সব কিছুতেই সিদ্ধহস্ত তিনি। পারিবারিক বিরোধ থানা পর্যন্ত গড়ানোর পাকা খেলোয়াড় গোলাপগঞ্জ উপজেলার আবদুল নুর ওরফে আবদুল আহাদ।

আহাদ এতটাই নিষ্ঠুর তার সহকর্মী সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে ২০১৩ সালে ফেনসিডিল ও চুরির মামলা দিয়ে জেল খাটায়। এছাড়াও রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় সরাসরি থানায় গিয়ে তদবিরের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আহাদের বিরুদ্ধে।

আব্দুল আহাদের জামাই আদর রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাহিনীর কাছে। প্রত্যেকটি বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে আতাঁত করে কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে আব্দুল আহাদ সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে কী ভাবে উপজেলা সদরে বিলাস বহুল বাসায় ভাড়া থাকেন। তার অভিজাত চলাচলের বিষয় নিয়ে অনেকের দৃষ্টিগোচর হলেও তার ক্ষমতার দাপটে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউপির চৌঘরী এলাকায় এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পারিবারিক তেমন অর্থের জোগান নেই। তার সৎ ভাইদের অর্থের জোগান কিছুটা থাকলেও তিনি সৎভাইদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে।

ফলে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি উপজেলা সদরে ইসলাম প্লাজার বিলাসবহুল বাসায় ভাড়া থাকেন দীর্ঘদিন থেকে। তিনি সংবাদ জগতে আসার আগে এলাকায় নুর মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। সংবাদপত্র জগতে এসে নুর মিয়া থেকে সাংবাদিক আব্দুল আহাদ নামে পরিচিতি লাভ করেন।

সাংবাদিকতার খেতাব নিয়ে তিনি উপজেলার সকল অপকর্মের উৎকোচের ভাগবাটোয়ারার অংশিদারিত্ব ভোগ করেন।

অভিযোগ রয়েছে গভীর রাতে গোলাপগঞ্জ থানায় চলে তার দহরম-মহরম। প্রতিদিন তিনি ধারণা দেন থানায়। যা গোলাপগঞ্জ মডেল থানার সিসি ক্যামেরা তদন্ত করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে ভূক্তভোগীরা মনে করছেন।গোলাপগঞ্জ থানার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সাংবাদিক আহাদ নিয়মিত গোলাপগঞ্জ থানায় আসা যাওয়া করেন। রাজনৈতিক মামলাগুলোর নিয়মিত আপডেট নেওয়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন