বিশেষ প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার এইচ ব্লকের বিলের পারের অন্তরসহ অজ্ঞাত ১৫ জন গত ১০ এপ্রিল শনিবার রাত ১০টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকার স্প্রিং টাওয়ারের সামনে এক রিকশা চালক (রনি) চোখে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়।
রক্তাক্ত অবস্থায় সেই রিকশা চালকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা হাসপাতালে পাঠায়। এঘটনার আজ প্রায় ১০ দিন হল, তবে এখনও মামলা নেয়নি শাহপরান (র:) মডেল থানা পুলিশ।
এদিকে, রিকশা চালকের বোন সিমার লিখিত অভিযোগ দাখিলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শাহপরান (র:) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান।
সেই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় শাহপরান (র:) মডেল থানা পুলিশের উপশহর ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই সমিরনের ওপর। দায়িত্বপ্রাপ্ত এই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে করোনা মহামারিতে কখনও থানায়-কখনও পুলিশ ফাঁড়িতে যান সিমা।
ভাইয়ের মামলার জন্য হত-দরিদ্র আহত রিকশা চালক রনির বোন সিমা বেগম রাত-বিরাতে, দিন-দুপুরে থানায় এবং পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে-যেতে আজ নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ গড়াচ্ছে এসএমপি’র পুলিশ কমিশনার অফিস পর্যন্ত।
রিকশা চালকের ওপর এই হামলার ঘটনায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশও হয়। তবুও অদৃশ্য কারনে টনক নড়রেনি এসএমপির শাহপরান (র:) মডেল থানা পুলিশের।
বিষয়টি নিয়ে সিমা ও উপশহর ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই সমিরনের একটি কথোপোকথনের একটি অডিও রেকর্ড জমা আছে । দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার কথোপোকথনে শুনলে বুঝতে বাকি থাকেবেনা ”মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কতোটা বেশি”।
সেই কথোপোকথনে এসআই সমিরনের তাকে বলছেন- এটা লিখা হয়নি, সেটা লিখা হয়নি! থানায় মামলা করে আসামীদের আটক করা যাবে না, ধারাও তেমন দিবে না, এর চেয়ে কোর্টে মামলা করো!
সেই কথোপোকথনে এসআই সমিরন অভিযুক্ত আসামীদের পক্ষে ছাফাই গেয়ে হয়রানীর শিকার বাদিকে বলছেন-কাউকে না জানিয়ে চুপটি করে ফাঁড়িতে চলে আসো, আমি তাদের ফাড়িঁতে ডেকেছি, তুমি চাইলে বিষয়টি ফাঁড়িতে বসে শেষ করে দিবো।
এতে রাজি হয়নি সিমা। সে বিষয়টি জানায় স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এবং ক’জন সাংবাদিকদের। বর্তমানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের তোপের মুখে বিপাকে পড়ে রোববার রাতে এসআই সমিরন নিজের পকেটের টাকা দিয়ে অসুস্থ সিমাকে সোমবার মামলা হবে বলে শাহপরান (র:) মডেল থানায় পাঠায়। সোমবারও সে থানায় যায়, তবুও সেই মামলা হয়নি!
এ বিষয়ে উপশহর ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই সমিরন বলেন,আমি মেয়েটির উপকার করতে চেয়েছিলাম। তাই বলেছিলাম, কোর্টে মামলা করতে! করোনা মহামারিতে কোর্ট কবে খুলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলেন নি। তার কথোপোকথনের বিষয় এবং কাউকে না জানিয়ে চুপটি করে বিষয়টি ফাঁড়িতে বসে শেষ করার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন। যা সিলেট লাইভ কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত।
একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তরকে বাঁচাতে উপশহর ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই সমিরনের কাছে একাধিক বার গিয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে এসআই সমিরনের মুঠোফোনেও কথা বলেছে। যা মুঠোফোনের নাম্বারের কললিস্ট (সিডিআর) ঘাটলে সত্যতা মিলবে।
আহত রিকশা চালক রনি উপশহরের সৈয়দানীবাগের আরজু মিয়ার কলোনীর নুরুল আমিনের ছেলে। সিমার লিখিত অভিযোগে উপশহরের এইচ ব্লকের আউয়াল মিয়ার ছেলে অন্তরকে প্রধান আসামী করা হয়।
বাদি হয়রানির প্রসঙ্গে এসএমপি’র এক উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে আলাপ হলে তিনি বিষয়টি শাহপরান (র:) মডেল থানা শাহপরান থানার এসি মো. মাইনুল আফছারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
সোমবার রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে তাকে কল করলে তিনি বলেন, কাল দিনে কল করার জন্য!
দেশের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমেই সমাজে বিরাজ করে শান্তিশৃঙ্খলা। কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে আজ আমাদের দেশে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
অনেক সময় তারা দুর্বলের পাশে না দাঁড়িয়ে সবলের হাতকে আরো শক্তিশালী করে। অপরাধ দমন করা যাদের দায়িত্ব, তারা নিজেরাই যখন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে, তখন আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে কীভাবে! সাধারণ মানুষ যখন নিরুপায় হয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়, তখন পুলিশ তাদের সহায়তায় এগিয়ে না এসে উল্টো হয়রানি করে। এসময় আইন, নীতি, নৈতিকতা এদের কাছে গুরুত্ব পায় না। অনেক পুলিশ সদস্য বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার চেয়ে পকেট ভারী করতে আজ ব্যস্ত। এ কারণেই ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে যেতে উৎসাহ দেখায় না।
তবে সব পুলিশই যে অন্যায় করে, তা বলা হচ্ছে না। পুলিশের অনেক সদস্য ঝুঁকি নিয়ে এখনও পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন