বিশেষ প্রতিবেদক :: নিষেধাজ্ঞার পরেও গোয়াইনঘাটের জাফলং নদী থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই পাথর উত্তোলন করছেন বলে এবার অভিযোগ উঠেছে। জাফলংয়ের ডাউকি নদের মন্দিরের জুম এলাকায় পানি গভীরে গর্ত করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামাই সুমনের নেতৃত্বে এই পাথর উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয় অভিযোগ করেছেন- মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসন টাস্কফোর্স নিয়ে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে! তবে ইসিএ ঘোষিত জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও অদৃশ্য কারণে নদীগর্ভে জামাই সুমন গংদের এই কর্মযজ্ঞের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না গোয়াইনঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কর্মকর্তারা।
শনিবার গোয়াইনঘাটের জাফলং নদী থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে এক বারকি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তারপর বেড়িয়ে আসে এসব অজানা তথ্য। নিহত বারকি শ্রমিকের নাম পলাশ মিয়া (১৬)। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানার জাতীয়পাড়া এলাকায়। তার পিতা মঙ্গল মিয়া। বারকি শ্রমিক ছিলো পলাশ। কাজের সুবাদে সে তার বাবা-মা ও পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাফলংয়ের মেলার মাঠ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো।
সূত্র জানায়, গর্তের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নিহত পলাশের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের না করার জন্য পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পাথর শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে পলাশ মিয়া ও তার ভাই ভুট্টোসহ ক’জন শ্রমিক জাফলংয়ের ডাউকি নদের মন্দিরের জুম এলাকায় পাথর উত্তোলন করার জন্য পানির গভীর একটি গর্ত করে। বিকেল ৫টার দিকে গর্তের পাশে বারকি নৌকার একটি বোমা মেশিন স্থাপন করে গর্ত থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য চেষ্টা চালায়। এ সময় অসতর্ক অবস্থায় বোমা মেশিনের ধাক্কা লেগে পলাশ নৌকা থেকে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গর্তে পড়েন তার বাবা মঙ্গল মিয়া ও ভাই ভুট্টোসহ আরো ৩ জন। কিন্তু কেউই তাকে বাঁচাতে পারেননি। গর্তে পরে বোমা মেশিনের পাইপে মুখ চেপে গর্তেই তার মৃত্যু হয়। পরে আশপাশের এলাকার শ্রমিকেরা গর্ত গিয়ে পলাশকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এসময় আহত অবস্থায় তার বাবা মঙ্গল মিয়া, ভাই ভুট্টো মিয়া ও এক বোনকে উদ্ধার করে শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে যান গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন রায়। তিনি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
এদিকে- ঘটনাটি জানাজানি হলে জামাই সুমন গংদের এসব অজানা তথ্য জেনে যাবে সবাই। তাই ধামাচাপা দিতে স্থানীয় ক’জন সাংবাদিকদের আশ্রয় নেয় তারা। মেইল মাধ্যমে পাঠানো হয় মনগড়া প্রতিবেদন। ”নৌকার মেশিনের পাখায় লেগে বারকি শ্রমিকের মৃত্যু!” পাশাপাশি পলাশের পরিবারকেও মামলা না করার জন্য নানান হুমকি ও প্রলোভন দেখাচ্ছে জামাই সুমন গংরা।
স্থানীরা জানান, ইসিএ নির্দেশনা অনুযায়ী জাফলংয়ে বালু-পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাথর শ্রমিকেরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের করে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। পলাশ যে বোমা মেশিনের পাইপে মুখ চেপে গর্তে নিহত হয়েছে, সেটি জাফলংয়ের পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা ইমরান হোসেন সুমনের বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদ। পরিদর্শন শেষে দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, জাফলংকে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয় ২০১২ সালে। সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বালু ও পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে জাফলংয়ে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাউকি নদ থেকে আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলংয়ের ডাউকি নদও পড়েছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন